বদরুল আলম মজুমদার

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নির্বাচন : এক দফা আন্দোলনের ইঙ্গিত বিএনপির

বিরোধী দল বিএনপি দলীয় নেতাদের মত নিতে দুই দফা বৈঠক শেষ করেছে গতকাল রাতে। দুটি ধাপে ছয় দিনব্যাপী চলা মতবিনিময় সভায় ৫ শতাধিক নেতা দলের আন্দোলনের কৌশল নিয়ে নিজেদের মত তুলে ধরেছেন। দলের এসব নেতারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যেতে বিএনপির হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন। দুই দফার বৈঠকে দলের নেতারা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে একটি মাত্র দফা নিয়ে মাঠে নামার মত দিয়েছেন। এর বাইরে সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও বিভিন্ন ইউনিটে কোন্দল মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী করার তাদিগও দিয়েছেন তারা।

নেতারা আন্দোলনের কৌশল নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নব্বইয়ের চেতনায় করলে সফলতা আসবে না। মনে রাখতে হবে, ১৯৯০ আর ২০২১ এক নয়। তখনকার প্রশাসন আর বর্তমান প্রশাসনও এক নয়। আন্দোলন সফল করতে হলে পরিকল্পনামাফিক কর্মসূচি দিতে হবে। এর আগে শক্তিশালী করতে হবে সব সংগঠন। ঘরে বসে কমিটি করলে হবে না, নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি শাখা কমিটি করতে হবে।’

তারা আরো বলেন, ‘আন্দোলনের জন্য শুধু সংগঠন শক্তিশালী করলেই চলবে না। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনও আদায় করতে হবে। এ জন্য বাড়াতে হবে দলের কূটনৈতিক তৎপরতা।’ এ সময় নির্বাচন কমিশন গঠন, ভবিষ্যতে জোটের রাজনীতিসহ আরো কিছু বিষয়ে অভিমত তুলে ধরেন নেতারা। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি অংশ নেন। বৈঠকের শেষ দিনে খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠক হয়। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড।

তৃতীয় দিনের বৈঠকে ১২১ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৯০ জন উপস্থিত ছিলেন। মূল মঞ্চে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম। সহযোগিতায় ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন নসু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার। প্রায় ছয় ঘণ্টার বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থা এবং দলের করণীয় কী হতে পারে সে বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে তারা মতামত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, একের পর এক আইন করে তারা (সরকার) সাংবাদিকদের, সংবাদপত্র ও লেখার যে স্বাধীনতা সেটাকে বিনষ্ট করেছে। দেশে একটা ত্রাসের কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এর থেকে মুক্তি পেতে আমরা নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে আলোচনা করছি। আলোচনা শেষ হলে বিস্তারিত জানাব।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ নেতাই বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। দেশের সব বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যেতে হবে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পঞ্চগড় জেলা শাখার সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলন আর ২০২১ সালে শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলন এক নয়। এখনকার প্রশাসন ও নব্বইয়ের প্রশাসন এক নয়। এ সরকার রাষ্ট্রের সব কিছু দলীয়করণ করেছে। ফলে নব্বইয়ের চেতনা নিয়ে আন্দোলন করলে হবে না। আন্দোলন করতে হবে পরিকল্পনামাফিক।

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে কোনো সমন্বয় নেই। কমিটি নিয়ে বাণিজ্যেরও অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, রাজনৈতিক কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। কিন্তু যখন হাইকোর্টে জামিনের জন্য আসি তখন দলীয় আইনজীবীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। বরং আমাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। অথচ এসব আইনজীবী হাইকমান্ডের কাছে বলেন, তারা নাকি ফ্রিতে দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা দেখেন। এসব বিষয় হাইকমান্ডের জানা উচিত।

রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, আন্দোলনে সফলতা আনতে হলে তৃণমূলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় থাকতে হবে। এতে করে সংগঠন শক্ত হবে। সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও সমর্থন আদায় করতে হবে। এজন্য দলের কূটনৈতিক উইংকে শক্তিশালী করা ও কার্যকর ভূমিকাও রাখতে হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মতামত শোনার পর দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের পদ-পদবি এবং সামাজিক অবস্থানের কারণে কেউ পালিয়ে থাকতে পারবেন না। আন্দোলনের ডাক আসলে কারাগারে যেতেই হবে। সেক্ষেত্রে রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে সেটাই হবে সফলতা।

সবাই আন্দোলনের কথা বলেছেন, দলকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। আন্দোলনের মাঠে না থাকলে পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু আপনারা যে মতামত দিয়েছেন তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। তাহলে আন্দোলনে সফলতা আসবেই আসবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্বাচন,বিএনপি,আন্দোলন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close