বদরুল আলম মজুমদার

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইউপি নির্বাচন : স্বতন্ত্র প্রার্থীতে আপত্তি নেই

সামনে শুরু হতে যাওয়া স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবে না বিএনপি। এমন সিদ্ধান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করেছিল দলটি। অবশ্য করোনা অতিমারির কারণে সেই নির্বাচনগুলো স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এখন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের শেষপর্যায়ে এসে চলতি মাস থেকে স্থানীয় সরকারের সিরিজ নির্বাচন আয়োজনের পথে হাঁটছে ইসি। এই ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়—এমন সিদ্ধান্তে বিএনপি এখনো অটুট আছে। তবে এবার কৌশল পাল্টিয়ে নেতাদের নির্বাচনি মাঠে থাকার মৌন সম্মতি দিয়ে রাখছে দলটি। সরাসরি দলীয় ব্যানারে না দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র বা ভিন্ন কোনো সামাজিক ব্যানারে নির্বাচন করলে তাতে বাধা দেবে না বিএনপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু কোনো নির্বাচনের যোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত শনিবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিএনপির এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চরম প্রতিকূল অবস্থাতেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে, এই কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের যোগ্য নয়।

বিএনপির মতে, এই সরকার অনির্বাচিত একটি সরকার এবং সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই কমিশনের প্রধান কাজ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা বিএনপি সব সময়ই করে আসছে। তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে নিজেদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত জানাল।

জানা যায়, এসব নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রভাবে নেতারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ বা বহিষ্কার করা হবে না। কেন্দ্রের এমন মনোভাব জানার পর আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), পৌরসভা ও উপজেলার নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

যদিও নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। দলটির একটি অংশ মনে করে, শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা, হয়রানি, জেল-জুলুম, সময়, শ্রম ও অর্থব্যয় করার কোনো মানে নেই।

এসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটারদের আস্থা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ নষ্ট করছে। তাই আগামীতে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক। আবার আরেকটি অংশ মনে করছে, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। এতে করে সাংগঠনিকভাবে দল আরো শক্তিশালী হয়।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, এ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটিং সিস্টেমটাই ভেঙে ফেলেছে। তাদের অধীনে এ দেশে আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংসদের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কেউ স্বতন্ত্রভাবে ভোট করতে চাইলে বাধাও দেওয়া হবে না।

বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে না। বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিভিল অফিসারদের একটি অংশের সঙ্গে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সংগঠিত একটি বাহিনী যদি দিনের পর দিন স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, সেখানে গিয়ে লোক ক্ষয় করে লাভ কী? বরং এদের সরানোর প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা উচিত।

এক প্রশ্নের উত্তরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে সক্রিয় হতে পারত এটা যেমন ঠিক, আবার সেই সক্রিয় নেতাকর্মীদের ওপর যখন রাষ্ট্রীয় শক্তির আঘাত আসে তখন আবার একটা ভয়ের সঞ্চার হয়- এটাও ঠিক। আমরা সবকিছু বিবেচনা করে শিগগিরই হয়তো আবার বসব। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।

সর্বশেষ গত বছরের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এরপর আর জাতীয় সংসদের কোনো উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে তারা অংশ নেয়নি।

তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রতিদিনে সংবাদকে বলেন, যেখানে নির্বাচনই নেই, সেখানে নির্বাচনে গিয়ে কী লাভ। নির্বাচনের নামে যা হচ্ছে তা একটা ভ-ামি। এতে অংশগ্রহণ করা আর না করা সমান কথা। তাই প্রথম জরুরি কাজ হচ্ছে নির্বাচনে পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দলনিরপেক্ষ একটা অবস্থায় নির্ধারণ করা। সেজন্য যে সিস্টেম রয়েছে এটাকে পরিবর্তন করতে হবে। এ পরিবর্তনের আগে ভালো কোনো কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। এটা বিএনপির বোধোদয় হয়েছে।

কুমিল্লা-৭ ও স্থানীয় সরকারের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের ভোটের তারিখ ৭ অক্টোবর নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকারের ২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি উপজেলা পরিষদ, ছয়টি পৌরসভা ও চারটি সিটি করপোরেশনের ৫টি ওয়ার্ডের উপনির্বাচন রয়েছে। করোনায় আটকে থাকা প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯টি পৌরসভায় ২০ সেপ্টেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের কম-বেশি সাড়ে ৩ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইউপি নির্বাচন,স্বতন্ত্র প্রার্থী,বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close