মিজান রহমান ও জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২৩ জুন, ২০২১

স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রার নাম আওয়ামী লীগ

আজ ২৩ জুন উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে (হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি) এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম হয় ক্ষমতাসীন দলটির। এরপর জাতি গঠনের প্রতিটি সোপানে-স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে আওয়ামী লীগ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সময় কেটেছে লড়াই-সংগ্রামে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র সবই দেখেছে দলটি। সবকিছু মোকাবিলা করে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি টানা এক যুগ ক্ষমতায় রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম থেকে শুরু করে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে যে রাজনৈতিক দলটি বারবার নেতৃত্ব দিয়েছে তার নাম আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের এই দলটির নেতৃত্বেই স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা থেকে উন্নয়নের মহামঞ্চে এক অদম্য অগ্রযাত্রায় আজ শামিল হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে উন্নতসমৃদ্ধ আদর্শ গণতান্ত্রিক ও উন্নত রাষ্ট্র সেই প্রত্যাশায় পথ চলছে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ।

১৯৪৯ সালের এইদিনে ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে শুরু হয় আওয়ামী লীগের পথচলা। বাঙালি জাতির জাগরণ, জাতীয় চেতনার বিকাশ, হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির জন্য গণজোয়ার, অকুতোভয় সংগ্রাম, জয় বাংলা স্লোগান, নৌকা প্রতীকে ভোটদান ও মহান স্বাধীনতা; এর সবকিছুর মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির হাত ধরেই প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙিয়েছে বাঙালি। ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত কোটি কোটির মানুষকে সূর্যের মতো করে জাগিয়ে তুলেছে। আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বাঙালির প্রাণ, স্বাধীনতার প্রাণভোমরা। বাঙালি জাতির প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশজুড়ে গণমানুষের দলে পরিণত হয় এটি। তিনি হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের মধ্যমণি। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথচলা একই সরলরেখায়, তাই কাউকে ছাড়া কারো ইতিহাস রচনা করা সম্ভব না। আর স্বাধীনতার পর আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশকে নতুন করে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাই আধুনিক বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা একই সূত্রে গাথা। শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ বিশ্বের বুকে বিস্ময় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাঙালি জাতি।

এই শুভক্ষণে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা-সংগ্রামে প্রতিবন্ধকতা জয় করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাহসী মিছিলের নাম।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। তার দুটি স্বপ্ন ছিল। একটি হলো স্বাধীনতা আর অন্যটি হলো ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। একটি স্বপ্ন তিনি পূরণ করে গেছেন। অন্যটি পূরণে যখন কাজ করছিলেন, তখনই তাকে হত্যা করা হয়েছিল।’

এই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আরো বলেন, ‘১৯৮১ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিই। সেই পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে ৪০ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। চারবার তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। আমরা আশা করি তার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ হবে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপর নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা-সংগ্রামসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক অন্দোলন ও মহৎ অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম। শুধু আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই নয়, তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই দলটির মূল লক্ষ্য।’

আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। ২১ ফেব্রুয়ারির মাতৃভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, স্যাটলাইটের নিজস্ব মালিকানা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ বহু মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূরীকরণসহ সুদূরপ্রসারী সাহসী নেতৃত্বদানে বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে শেখ হাসিনা আজ অন্যতম।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত। এর প্রমাণ করোনাকালে আমরা পেয়েছি। দলের সবাই জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে আমরা সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশলী হয়েছি।’

নব্বইয়ের দশকে ফের শুরু হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা। পঁচাত্তরের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে দৃশ্যমান গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন এবং বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানে বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস। এ রাজনৈতিক দলটি এ দেশের সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ দলটির নেতৃত্বেই এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজ গার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের গৌরবোজ্জ্বল ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।

২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা সুসংহত হতে সক্ষম হয়ে জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি। কিন্তু এই আন্দোলনের শেষপর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবার নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতা গ্রেপ্তার এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম।

তবে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে দলটি।

আওয়ামী লীগের ৭২ বছরের ইতিহাস, দেশ ও মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে আত্মদানের ইতিহাস। সুখে-দুঃখে- দুর্যোগে দুর্বিপাকে সর্বদা গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাওয়াই আওয়ামী লীগের দৃপ্ত প্রত্যয়।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দলের হাল ধরেছিলেন। বাঙালিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। আজকের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তারই কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। একই সঙ্গে তিনি দেশেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনন্য উচ্চতায় এখন বাংলাদেশ। সামাজিক, অর্থনৈতিক সব সূচকেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য এক আকর্ষণীয় দেশে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগকারীদের এক নম্বর পছন্দের দেশ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অগ্রযাত্রা,আওয়ামী লীগ,আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close