জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১১ জুন, ২০২১

তিন আসনের উপনির্বাচন

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন দৌড়ে ৯৫ নেতা

টানা তিনবারের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে দীর্ঘ হচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা। আসছে তিন সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনেও মনোনয়ন কেনার হিড়িক পড়েছে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে না এমন ঘোষণায় ‘জয় সহজ’ ভেবে মাঠে নেমেছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সংসদ সদস্যের পরিবার, সাবেক আমলা এমনকি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরাও। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ দিন পর্যন্ত ৯৫ নেতা মনোনয়ন কিনেছেন। এরমধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে ৩৫ জন, কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ জন এবং সিলেট-৩ আসনে ২৫ জন। তবে কথায় আছে, ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার’। কারণ, আগামীকাল শনিবার দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ঠিক হবে প্রার্থীর নাম।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার বাসভবন গণভবনে হবে এই সভা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৮ জুলাই তিন আসনে ভোট হবে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবারই ‘বিশ্বাস’ শেখ হাসিনা তাকেই যোগ্য হিসেবে মনোনীত করবেন।

এখন অপেক্ষা প্রার্থীর নাম শোনার : ঢাকা-১৪ আসনের দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক, কুমিল্লা-৫ আসনের আবদুল মতিন খসরু এবং সিলেট-৩-এর মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হয় এই আসন তিনটি। মনোনয়ন সংগ্রহকারীরা বলছেন, উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি না আসায় নির্বাচনে বিজয় সহজ হয়ে উঠেছে। এ কারণেই মনোনয়নপ্রত্যাশী এত বেশি।

তবে এজন্য বিএনপিকে দায়ী করছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যারা এমপি ছিলেন তাদের মৃত্যুতে প্রার্থী বেড়েছে। এত দিন যিনি এমপি ছিলেন তিনি আসনকে সুশৃঙ্খলভাবে রেখেছেন। ফলে অন্য কেউ প্রার্থী হতে চাননি। এখন এমপির মৃত্যুতে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছেন, তাদের ধারণা দলের মনোনয়ন পেলেই এমপি হওয়া যায়। তাই তারা সুযোগ হারাতে চান না। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নেওয়ার কারণে অনেক নেতার মধ্যে এমন ধারণা জন্মেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা তৈরির কারখানা। আমরা যাদের হারিয়েছি তারা দীর্ঘদিন আসনগুলোতে এমপি ছিলেন। তাদের শূন্যতায় অনেক নেতা মনোনয়ন চান। এতে প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।’

বিএনপির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এলে আমরা তাদের জোর করে আনতে পারব না। এখানে দলটি দায়িত্বহীন দল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। মহামারি করোনা ও বন্যার সময় জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে পারেনি। তাই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন আর সুযোগ না পেয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। তারা একবার নির্বাচন থেকে সরে যায় আবার সঠিক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়। এগুলো মূলত তাদের নেতৃত্বহীন দলের পরিচয়।’

তবে প্রার্থী যতজনই হোক না কেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য নেতাকে মনোনীত করবেন বলে জানান তিনি।

ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন কিনেছেন প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য যুব মহিলা লীগ নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন। শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী।

এদিকে সিলেট থেকে আহমেদ জামিল জানিয়েছেন, সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে উল্লেখযোগ্যরা হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর (কয়েস) সহধর্মিণী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন। এদের মধ্যে প্রচারে এগিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।

জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনে আমি এ আসনে মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করেছি। এবার আশা করি দল আমাকে নিরাশ করবে না।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী ফারজানা সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। অতীতের প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে আমি কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তা অব্যাহত রাখতে এবং প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে মানুষের খেদমত করব।’

কুমিল্লা থেকে মারুফ আহমেদ জানান, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর আসনে মনোনয়ন কিনলেন তার স্ত্রী-ছোট ভাইসহ ৩৫ জন। তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর, কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও প্রয়াত মতিন খসরুর ভাই আবদুল মমিন ফেরদৌস, প্রয়াত মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিম সোবহান খসরু, ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবু ছালেক (সেলিম রেজা সৌরভ)। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য জাহেদুল আলম, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেম খান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. শাহ জালাল।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উপনির্বাচন,আওয়ামী লীগ,মনোনয়ন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close