বদরুল আলম মজুমদার

  ০৬ মার্চ, ২০২১

তারেকের ইচ্ছায় স্থানীয় ভোট বর্জন করার সিদ্ধান্ত

মাঠ গরম করার ফন্দি বিএনপির!

জাতীয় স্থায়ী কমিটির শেষ বৈঠকে সর্বসম্মত আলোচনার ভিত্তিতে সব ধরনের স্থানীয় নির্বাচন থেকে আপাতত সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। স্থায়ী কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নিলেও মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একক ইচ্ছায়ই এমন সিদ্ধান্তে এসেছে দলটি। দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা হিসাব সামনে রেখে ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে বিএনপি। তাই ‘প্রহসনের’ নির্বাচনে নেতাকর্মীদের ব্যস্ত না রেখে রাজনীতির মাঠ গরম করার প্রস্তুতি নেওয়ার চিন্তা আছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, রাজনৈতিক বা সামাজিক যেকোনো ইস্যুতে সরকারকে আর ছাড় দেবে না বিএনপি। গত নির্বাচনের পর থেকে নানামুখী চাপে থাকা দলটি এবার উল্টো সরকারকে চাপে ফেলতে কাজ করছে।

বিএনপির ওই নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে আর অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে নতুন রাজনৈতিক কৌশল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা এবং সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে সর্বশক্তি প্রয়োগের হিসাব নিয়েও এগোচ্ছে বিএনপি। এজন্য নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হচ্ছে তা থেকে দলের নেতাকর্মীদের রিজার্ভ রাখতে মূলত স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত। যেকোনো বাধা-বিপত্তি ও হামলা-মামলা উপেক্ষা করে এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজনীতির মাঠে সরব থাকতে চায় বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মনে করেছিলাম, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার অন্তত সুষ্ঠু ভোটের একটা পরিবেশ তৈরি করবে। নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে যা হয়েছে তা এত হতাশাজনক যে, আগামী দিনে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’

এত দিন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করার যোগ্য নয়। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এই নির্বাচন কমিশনের কাজ।’ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সরকার এখন নিজের ছায়া দেখলেই ভয় পায়। তাই বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনও এখন তারা সহ্য করতে পারে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো ইস্যুতে ছাড় দেবে না। প্রতিটি ইস্যুতেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।’

দলের অপর কয়েকজন নেতা জানান, আন্দোলনের অংশ হিসেবে এত দিন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলা হলেও মূলত এটি ছিল দলের একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। গত নির্বাচনের পর বিএনপিকে রাজপথে কোনো জায়গা দিচ্ছিল না সরকার। তাই সারা দেশে দলকে চাঙ্গা রাখতে স্থানীয় নির্বাচনগুলো সুযোগ হিসেবে নেয় বিএনপি। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও বার বার সে পথেই হেঁটেছেন তারা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিএনপি এখন সরকার হটানোর স্বপ্ন দেখছে। এরই অংশ হিসেবে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে দলটি। দলের একটি সূত্র মতে, সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে যে ভোট বিএনপির প্রার্থীরা পেয়েছেন তা নিয়ে খুবই হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। শতকরা ১০ ভাগ পৌরসভায় বিএনপির গড় ভোট একশরও কম। দলের স্থানীয় নেতারা কোনেভাাবেই এটি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাছাড়া ভোট কম পেলেও নির্বাচনী মাঠে থেকে মামলা-হামলার শিকার ঠিকই হতে হয়েছে। তাই নির্বাচনের নামে এমন ‘তামাশা’ আর এগিয়ে নিতে রাজি নন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।

ইসি সূত্রে জানা যায়, তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে পাঁচ ধাপে ২৩০টির বেশি পৌরসভায় ভোট হয়েছে। মূল লড়াই হয়েছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে। ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, নৌকা প্রতীকের ১৮৫ জন, স্বতন্ত্র ৩২ জন, বিএনপির ১১ জন, জাতীয় পার্টির একজন একজন জাসদের একজন প্রার্থী জয় পেয়ছেন মেয়র পদে।

একই নির্বাচনে পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৭৭টি, আর বিএনপি ২২টিতে জয় পায়। ২০১১ সালে ৯৬টিতে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। সে সময় বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থীরা জয় পান ৯৪টিতে।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,ভোট,ইসি,তারেক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close