জিয়াউদ্দিন রাজু

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হাইকমান্ডের কঠোর পদক্ষেপ

আওয়ামী লীগে হাইব্রিড আউট

অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এজন্য দলকে হাইব্রিডমুক্ত করতে ও অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করতে মহানগরের পরে এবার জেলা কমিটির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়া জেলা পর্যায়ের খসড়া কমিটির যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দেখভাল করছেন খোদ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এ প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে দলের ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। এ প্রক্রিয়া সমন্বয় করবেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সভায় বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এমনকি দলের পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সে কমিটি ভেঙে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের নেতাদের দাবি, টানা তৃতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী শব্দটি বেশি পরিচিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে হাইব্রিড বনাম দুর্দিনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সারা বছরই দ্বন্দ্ব থাকে। এর প্রধান কারণ, জেলা পর্যায়ে দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই পূর্ণাঙ্গ কমিটির হর্তাকর্তা। বাকি নেতাদের বিবেচনা না করেই তারা নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া কেন্দ্রে দফতরে জমা দেন। এ ব্যাপারে পদ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও নিজের অনুসারীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দিতেন। এর ফলে দলের দুর্দিনের ত্যাগী নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আসতে পারতেন না। জেলা পর্যায়ের সব বিষয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই নিজেই এবার জেলা পর্যায়ের কমিটি দেখভাল করছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব উপকমিটি, জেলা, মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সম্মেলন হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অধিকাংশ খসড়া দলের দফতরে জমা হচ্ছে। কমিটি জমা হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। পরবর্তীতে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেগুলো তিনি আবারও যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। বাছাই প্রক্রিয়ায় কোনো কমিটির বিষয়ে অসন্তোষ হলেই ওই জেলার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সমন্বয় করবেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা। এই বিশেষ বার্তা জেলা পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে দেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে ৩ অক্টোবর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দিকনির্দেশনা দেবেন।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অবশ্যই জেলা কমিটির খসড়া চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। কমিটি অসন্তোষ হলে তারাই পুনরায় খতিয়ে দেখবেন। যদি দলের পরীক্ষিত নেতারা পদবঞ্চিত হন, যারা ওই জেলা বা বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন তাকে অবশ্যই দলীয় সভানেত্রীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের নেত্রীও এ ব্যাপারে খুবই হার্ডলাইনে আছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যাদের আস্থা আছে এমন যোগ্য নেতারাই কমিটিতে স্থান পাবেন। কোনো হাইব্রিড বা অভিযুক্তদের দলে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,হাইব্রিড,অনুপ্রবেশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close