জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থিতা

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ওপর জরিপ চলছে

আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্থানীয় পর্যায়ে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ওপর জরিপ চালাচ্ছেন খোদ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সংস্থা ও নিজস্ব গোয়েন্দারা এ মুহূর্তে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ জরিপে যারা সফল হবেন, তাদেরকে দল মনোনীত করবে এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবেন এমনটাই পরিকল্পনা দলীয় হাইকমান্ডের। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মহামারি করোনার মধ্যে যারা ত্রাণ লুট করেছে বা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবার স্থানীয় নির্বাচন উপলক্ষে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের লিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে বলে জানা গেছে। এমন প্রার্থীরা মনোনয়নের দৌড়ে টিকবেন না। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে ক্ষমতাসীন দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা তৃতীয় টার্মে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের মধ্যে হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকরী শব্দটি বেশি শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে তৃণমূলে ‘হাইব্রিড বনাম দুর্দিনের নেতাদের সঙ্গে সারা বছরই এক জট লেগেই থাকে। এ বিষয়গুলোতে ক্ষুব্ধ দলীয় সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আগে নির্বাচনে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থের লেনদেন বেশি শোনা যেত। অন্যদিকে স্থানীয় বিশেষ কোনো নেতার অনুসারী বা এমপি-মন্ত্রীরদের অনুসারীরা স্থানীয় পর্যায়ে মনোনয়ন পেত বলেও শোনা যেত। কিন্তু এবার স্থানীয় নির্বাচনে অর্থের লেনদেন এবং ভাই লীগের সমাপ্তি হচ্ছে। কারণ এবার প্রার্থিতা তদারকি করছেন শেখ হাসিনা নিজেই। যেহেতু স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি জনগণের একটা সম্পর্ক থাকে, তাই জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্চে দলীয় হাইকমান্ড। তাই এবার দলীয় প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন ঘটাবে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এবার দলের দুর্দিনের নেতাকর্মী, সৎ, ত্যাগী ও আদর্শ এবং সাংগঠনিক কাজে দক্ষ প্রার্থীকেই মনোনীত করা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি।

দলের দফতর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠির বাইরে ইউপি নির্বাচনে ফরম কেনার সুযোগ নেই। এমনকি দলীয় কোনো এমপির সুপারিশেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা যাবে না। যা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে মনোনয়ন বিতরণ হচ্ছে বলে দফতর থেকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, এবারের জরিপে এলাকাবাসীর তথা জনমতকেই মূল্যায়ন করা হবে। অর্থের বিনিময়ে বিএনপি নেতা বা রাজাকারের সন্তান, মাদক ব্যবসায়ী, হত্যা মামলার আসামিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে জরিপ চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় উড়ে এসে জুড়ে বসাদের এবার কোনোভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও নির্বাচিত এলাকা সম্পর্কে তার জ্ঞান পর্যালোচনা করা হবে। এলাকার ভোটার, সমস্যা, সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রার্থী কতটা জানেন, নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকা নিয়ে কর্মপরিকল্পনা, জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে বিগত দিনে তার উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড প্রভৃতি যাচাই হচ্ছে। এ ছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগে প্রার্থীর অবস্থান, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত কি না, দলের জন্য তার অবদান; বিশেষ করে করোনা বা বন্যায় সংকটকালে এবং দলের সংকটকালে প্রার্থীর ভূমিকা মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।

প্রায় ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অপকর্মের কারণে মনোনয়ন-সংক্রান্ত বোর্ড এবার কঠোর অবস্থানে। অর্থাৎ প্রার্থীর আর্থিক সক্ষমতা, নির্বাচনের অর্থ কোথা থেকে পাবেন। আয়ের উৎস, প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে কি না, কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, মামলা থাকলে কোন আমলে হয়েছে, কখন ও কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে সবকিছু যাচাই করেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে এলাকার জনমতকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। বিগত দিনে প্রার্থীর কার্যক্রম বিশেষ করে মহামারি করোনার মধ্যে কেমন জনসেবা করেছে, প্রার্থীর ব্যাপারে এলাকাবাসীর কেমন ধারণা, প্রার্থীর সততা ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হবে।

বিএনপির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে যেকোনো নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমরা আশা করি, বিএনপিও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তাই আমরা বিএনপিকেও এবার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এ নির্বাচনের বিষয় মাথায় রেখে আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা প্রার্থীদের যোগ্যতা সততা ও জনগণের সম্পৃক্ততা এবং দেশের জন্য কাজ করবে এমন নেতৃত্বকে অনুসন্ধান করে নির্বাচিত করা হবে। বিশেষ করে এবারের করোনা ও বন্যায় যারা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তারা অগ্রাধিকার পাবেন।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জরিপ,প্রার্থী মনোনয়ন,আওয়ামী লীগ,স্থানীয় নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close