জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন

প্রার্থী হতে আ.লীগের তৃণমূল নেতারা মাঠে

দলের অন্যান্য হাইকমান্ডের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আলোচনায় এবার উঠে আসছে আসন্ন স্থানীয় সরকারের তৃণমূলের দুটি বৃহৎ নির্বাচনের ইস্যু। একটি পৌরসভা, অন্যটি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। যথাক্রমে এ দুটি নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে এবং নতুন বছরের মার্চে শুরুর কথা রয়েছে। এ দুটি নির্বাচন তৃণমূলের ভিত্তি হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে চলছে এ নিয়ে জোর প্রস্তুতি। তীক্ষ্ম নজরও রাখছে দলীয় হাইকমান্ড।

ইতোমধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের সক্ষমতা কেন্দ্রের কাছে তুলে ধরতে নির্বাচনী মাঠে সীমিত আকারে প্রচার শুরু করেছেন। লক্ষ্য কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডকে বোঝানো পৌর ও ইউপির দলীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বাইরে যোগ্যতায় তারাও যেন কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। স্ব-স্ব স্থান থেকে কর্মীকে সক্রিয় করতে তাই এখন থেকেই কোমর বেঁধে নির্বাচনী এলাকায় নেমে পড়েছেন। তৃণমূলের নীতিনির্ধারকরাও কর্মীদের ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখছেন। কোন প্রার্থী যোগ্যতায় বিপরীত রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকবেন। সেই অর্থে বলা যায়, এখন থেকেই ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল নেতারা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করতে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

দলের মূলশক্তি তৃণমূল। সেদিক থেকে পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় পর্যায়ের জনগণের সঙ্গে ব্যাপক সম্পৃক্ততা থাকে, এ বিষয়টি মাথায় রেখে দলের প্রার্থী বাছাইটি বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বিতর্কমুক্ত, ত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতা নির্বাচন করে তাদের মধ্য থেকে আগামী নির্বাচন দুটিতে প্রার্থী মনোনীত করায় বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। হাইকমান্ডের চিন্তা ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত দূরত্ব কমিয়ে আনা; যাতে তৃণমূল আরো বেশি শক্তিশালী হয়।

দলীয়সহ নানা দিক বিবেচনা করে চলতি মাসেই বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এ সভায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতা নির্বাচন ও মনোনয়নে একটা দিকনির্দেশনা দিতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় সভায় নেতারা এমনটিই আভাস দিয়েছেন।

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের জন্য তৎপর হচ্ছেন। অনেকেই জনগণের কাছে দোয়া চেয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও জানান দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নে এবার বড় ধরনের পরিবর্তন ও চমক থাকতে পারে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে। বিশেষ করে মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে যারা সরকারি দায়িত্ব পালনে গাফিলতি এবং সরকারি খাদ্য ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাদের তালিকা দলীয় প্রধানের হাতে রয়েছে। এমন অর্থ আত্মসাৎকারী নির্বাচিত ও যোগসাজশকারী নেতারা মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন।

অন্যদিকে যারা এই করোনা ও বন্যার মধ্যে নিজ উদ্যোগে জনগণের পাশে থেকে সরকারকে সহযোগিতা ও দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় নিবেদিত ছিলেন, প্রার্থিতা মনোনয়নে দল তাদের মূল্যায়ন করবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনে এবং আগামী বছর মার্চে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওইসব ত্যাগী ও নিবেদিতদের ঠাঁই হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনা, সম্প্রতি দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে ঠিকই, তবে যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে; তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। কারণ জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনও বেশি গুরুত্বপূর্ণ থাকে দলের কাছে।

এখন থেকেই সারা দেশে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কারা দল ও জনগণের জন্য কাজ করছেন বা কাজ করার দক্ষতা রয়েছে। বিশেষ করে এবার মহামারি করোনা ও দীর্ঘদিনের বন্যার মধ্যে কারা সরাসরি মাঠ থেকে জনগণের জন্য কাজ করেছেন, সেই আমলনামাও দেখা হবে। এবারের নির্বাচনে সুবিধাবাদীদের বাদ দিয়ে দলের পোড়খাওয়া নেতাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে দীর্ঘদিন বঞ্চিত নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে তিনি তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এ নির্বাচনের বিষয় মাথায় রেখে আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা প্রার্থীদের যোগ্যতা, সততা ও জনগণের সম্পৃক্ততা এবং দেশের জন্য কাজ করবেন এমন নেতৃত্বকে অনুসন্ধান করে, যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিত করা হবে। তবে বিশেষ করে এবারের করোনা ও বন্যায় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করেও সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন এমন নেতৃত্ব দলে অগ্রাধিকার পাবে।

জানা গেছে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভায় ভোট করার চিন্তাভাবনা রয়েছে ইসির। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশের ২৩৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরে প্রথমবারের মতো দলভিত্তিতে এই নির্বাচনে ২৩৫ পৌরসভার মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ১৮২টিতে (সাতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) এবং বিএনপি ২৪টিতে বিজয়ী হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে একজন এবং স্বতন্ত্র ২৮ মেয়র পদে নির্বাচিত হন।

পৌরসভার পরপরই আয়োজন করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের পর তৃণমূল মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ২০২১ সালের প্রথম দিকেই সারা দেশে প্রায় চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য উপযোগী হয়ে পড়বে বলে জানা গেছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইউপি নির্বাচন,পৌরসভা নির্বাচন,আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close