বদরুল আলম মজুমদার

  ২৭ জুলাই, ২০২০

ঢাকা-১৮ আসন উপনির্বাচন

আগে চিঠি পাওয়া ২ নেতাই বেশি তৎপর

বাহাউদ্দিন সাদী, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা সিটির উত্তরের প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-১৮ আসনটি শূন্য ঘোষিত হয় চলতি মাসের শুরুর দিকে। সাহারা খাতুনের মৃত্যুর পর প্রাথমিক শোক কাটিয়ে উঠে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এখন উপনির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমান মেয়াদে করোনার জন্য বিএনপি বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন থেকে সরে থাকে। এর মধ্যে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন ধানমন্ডি থেকেও নির্বাচন করেনি বিএনপি। কিন্তু করোনা সংকটকালীন রাজনৈতিক পট-পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বিএনপি আগামী উপনির্বাচনগুলোতে অংশ নিতে মোটামুটি রাজি। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে। তবে দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকায় খালি হওয়া দুটি আসন এবার বিনা বাধায় ছাড়বে না দলটির হাইকমান্ড। অপর দিকে স্থানীয় প্রার্থীদের নির্বাচন করার প্রবল আগ্রহও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে বড় কারণ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থিতায় প্রতিদিনই নতুন নতুন চমক আসছে। এখন পর্যন্ত সংসদীয় আসনটির চারজন প্রার্থীকে নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রপাগান্ডা চোখে পড়লেও গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নেমেছেন আরো একজন প্রার্থী। তিনি হলেন সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন। নতুন এ প্রার্থী বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। বর্তমান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রভাবশালী সহ-সভাপতি এ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এফ রহমান হলের ভিপি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল করার সুবাধে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ হাইকমান্ডের প্রায় সবাই ব্যক্তিগতভাবে চিনেন তাকে।

এমন একটি সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে নিজেকে ঢাকা-১৮ আসনের একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দাবি করে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি বৃহত্তর উত্তরা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনে থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি। আমাদের সংসদীয় এ আসনটিতে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের পর এখানে অনেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন কিন্তু কেউ তেমন সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন করা বৃথা। এটি এরই মধ্যে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করার ইচ্ছা না থাকলেও নেতাকর্মীদের চাপে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি। তাছাড়া এখানে প্রার্থী হিসেবে যারা আছেন তাদের থেকে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনেক সমৃদ্ধ উল্লেখ করে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদের কথা জানান।

আসনটিতে গত নির্বাচনের প্রার্থী ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে। এবার তাদের সে রকম আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। তবে দলীয় মনোনয়ন নিতে তৎপর বিএনপির প্রার্থীরা। করোনার কারণে জমায়েত নিষিদ্ধ থাকায় প্রকাশ্যে কিছু দেখা না গেলেও গত কয়েক দিন থেকে সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব তারা। এ আসনে নির্বাচন করার জন্য বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের মহানগর উত্তর সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন আগে থেকেই সক্রিয়। তার এ সক্রিয়তা নির্দিষ্ট একটি বলয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও কখনো সিনিয়র পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের প্রভাবের কাছে তুচ্ছই থেকেছেন জাহাঙ্গীর। ২০১৪ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং পরের নির্বাচনে কামরুল ইসলাম নির্বাচনে না আসায় যুবনেতা জাহাঙ্গীর ভেতর ভেতর এমপি নির্বাচন করার ব্যভপক প্রস্তুতিতে ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত নির্বাচনে জাহাঙ্গীর হোসেন ও আরেক ব্যবসায়ী নেতা বাহাউদ্দিন সাদীকে দলীয় চিঠি দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ী নেতা নিজের ব্যক্তিগত কারছে গত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে খুব আশাবাদী এবং নির্বাচনেও থাকতে চান শেষ পর্যন্ত। হাইকমান্ড ঘনিষ্ঠ তৃণমূল দরদি এ নেতা বৃহত্তর উত্তরায় গত সাত বছর আলোচনার বাইরে থেকে নেতাকর্মীদের জেলজুলুম থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ের সমস্যাগুলো নিয়েও কর্মীদের পাশে ছিলেন। এজন্য ঢাকা-১৮ আসন এলাকায় তার একটি ডেডিকেটেডে কর্মী বাহিনী গড়ে উঠেছে যা অনেক সুবিধাবাদী নেতার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি অনেকের। এছাড়া সক্রিয়তার কারণে ঢাকা-১৮ আসনের রাজনৈতিক ভারসাম্যও তৈরি হয়েছে। তাই মনোনয়ন নিতে এবার সক্রিয়ভাবে তার মাঠে নামাকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূলের বড় একটি অংশ।

নিজের প্রার্থিতার ব্যপারে বাহাউদ্দিন সাদী বলেন, দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমি প্রস্তুত আছি। মাঠে নামার প্রসঙ্গে সাদী বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই দুর্যোগ ও সংকটকালীন মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার থেকেও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে আমরা আপাতত প্রচার বন্ধ রেখেছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলীয় নির্দেশনা পেলে যেকোনো সময় পূর্ণশক্তিতে প্রচার-প্রচারণা চালানোর মতো সাধ্য এবং সামর্থ্য দুটোই আমার আছে এবং শিগগিরই মাঠে নামব আমরা।

এ আসনে বিএনপি থেকে আরো যারা মনোনয়ন চান তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ ব্যবসায়ী এম কফিল উদ্দিন। নিজেকে ত্যাগী নেতা দাবি করে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এর বাইরে মনোনয়ন চান স্থানীয় ধনকুবের ও দক্ষিণখান থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেনও।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,ঢাকা-১৮ আসন,নেতা,উপনির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close