বদরুল আলম মজুমদার

  ২৭ আগস্ট, ২০১৮

বিএনপির লক্ষ্য খালেদার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকার

কয়েক মাস পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে তফসিল ঘোষিত হবে। সেই মতো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেকটাই সেরে ফেলেছে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে নামার নির্দেশনা দেওয়া আছে বহু আগেই। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে হাওয়া লেগেছে নির্বাচনের। অন্যদিকে, বাম দলসহ ২০ দলের বাইরে রাজনৈতিক দলগুলো বহুমুখী নির্বাচনী এজেন্ডা নিয়েও ব্যস্ত। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে তা-ই নিয়েই যত জল্পনা। নির্বাচন প্রশ্নে দলটির সিনিয়রদের মাঝে এক প্রকার নীরবতাই লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে সরকার দলসহ অনেকে বলেছেন ভেতর ভেতর বিএনপি নির্বাচনের পথেই হাঁটছে।

এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দৃশ্যমান নীরবতা কোনো কৌশল কি না তা জানতে দলটির দুইজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, আগামী নির্বাচন প্রশ্নে তারা কোনোভাবেই নীরব ভূমিকায় নেই। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও দলটির মূল কর্তব্য হচ্ছে তাদের কারারুদ্ধ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। কারণ তারা মনে করে, নির্বাচনকে একতরফা করতেই সরকার খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখেছে। তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও খালেদার মুক্তি একই সূত্রে আবর্তিত। তারা চান নির্বাচনের আগে যেকোনোভাবেই হোক খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে। আর মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই বিএনপি আগামী নির্বাচনের পথে হাঁটবে। তাই খালেদার মুক্তির দাবিতে দলটি এখন রাজপথে ভূমিকা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন প্রস্তুতিই বিএনপিকে নির্বাচনের পথে নিয়ে যাবে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও। তা কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় হলেই দেশের মানুষ তা অনুধাবন করতে পারবে। নির্বাচনের আগে প্রতি মুহূর্তেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়। আর আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। রাজপথেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবে বিএনপি।

এদিকে, বিএনপি বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, সেনা মোতায়েনের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও। দলীয় সূত্র জানায়, এসব দাবি দাওয়ার মাঝেই বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সম্প্রতি তৃণমূলের নেতাদের দেওয়া মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

ঈদের কয়েক দিন আগে ৭৮ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মতামত পর্যালোচনা করতে দুই দিন বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকে সাংগঠনিক জেলার ১৬০ নেতার বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে প্রায় সব নেতার বক্তব্যেই ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এবং আন্দোলনের বিকল্প নেই—এমন মত উঠে এসেছে। এই মতামতকে সামনে রেখেই আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি।

এ বিষয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। তবে শুরু থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে না—এ ধরনের কথা জোরগলায় বলে এলেও দাবি আদায় না হলে কী করবে স্পষ্টত সেই অবস্থানও পরিষ্কার করছে না দলটি। দলের অধিকাংশ নেতার জোরালো মতো হচ্ছে ২০১৪ সালের মতো আর নির্বাচন বর্জনের পথে যাওয়া ঠিক হবে না। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বক্তব্যেও এই বিষয়টি এখন স্পষ্ট। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী জানুয়ারিতে একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দাবি আদায়ের পথেই হাঁটতে হবে দলটিকে। এমন বাস্তবতা মেনে নিয়েই কর্মকৌশল চূড়ান্ত করছে বিএনপি। তবে আগের মতো লম্বা সময় নিয়ে আন্দোলনে যাবে না তারা। স্বল্প সময়ের কার্যকর অন্দোলন করেই দাবি আদায় করতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এক ধরনের বোঝাপড়া করছে তারা। সব ঠিক থাকলে তফসিল ঘোষণার পরই বিএনপি রাজপথ কাপাতে চেষ্টা করবে। তবে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ের মতো সাংগঠনিক ভিত্তি বিএনপির নেই। তারপরও দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার সব প্রচেষ্টা বর্তমান সময়েও চলতে দেখা গেছে দলটিতে।

বিএনপির অনেক নেতা জানান, ২০১৩ সালে দাবি না মানলে ভোট বর্জন—এমন সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন করলেও এবার দাবি পূরণ না হলেও ভোটে অংশ নেওয়ার চিন্তা করতেই হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন। এই আইন অনুযায়ী, পরপর দুইবার ভোট বর্জনকারী দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।

মূলত আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি দলের সাবেক ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কাজ করছে দলটি। এ ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত ও নেতাকর্মীদের মতামত এবং স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর ভিত্তিতে একটি সারসংক্ষেপও তৈরি করা হচ্ছে।

ইদানীং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় মিলিত হচ্ছেন। তবে এতে আগের মতো সংবাদকর্মীদের অবহিত করা হচ্ছে না। সেই সব বৈঠকের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তবে তার আগে তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকার নিশ্চিত করতে চায়। এ বিষয়ে তারা আন্দোলনের একটি ছকও কষছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের লক্ষ্যের পথে আমরা আছি। আন্দোলনকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। প্রতিটি আন্দোলনেরই একটি লক্ষ্য আছে। এখন সরকার সেই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া আমলে নেবে কি নেবে না, সেটা তাদের বিষয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ঠিক নির্বাচনের পূর্বে হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবু যদি নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তিনি মুক্তি পেয়েও যান সেক্ষেত্রে কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি—এমন প্রশ্নে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। আলাদা করে প্রস্তুতির দরকার নেই। বিএনপির জন্য জনগণ অপেক্ষায় আছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্দলীয় সরকার,বিএনপি,খালেদার মুক্তি,নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close