
‘পাহাড়িদের খাবার উৎপাদন বাজারের জন্য সহায়ক হতে পারে’

ঢাকায় এখন পাহাড়িদের খাবার পাওয়া যায় এবং এসব রেস্টুরেন্ট অনেক জনপ্রিয়। কোনও কোনও সময় আগে থেকে বুকিং দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেট এবং ক্রমবর্ধমান পর্যটনের এই যুগে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পাহাড়ি খাবারের একটি জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। এটি তাদের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি উপায়। আমি নিশ্চিত— পাহাড়ি খাবার, তাদের পোশাক, অলংকার, তাদের খাবার উৎপাদনের প্রক্রিয়া মূলধারার বাজারে জন্য সহায়ক হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় যারা অজানা আছে তাদের সম্পর্কে জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের জীবনের মান উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়দাতা বা আশ্রয়ের ফলে প্রভাব পড়া স্থানীয় বসবাসরত মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) কক্সবাজার জেলা এবং এর স্থানীয় জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর অন্তর্ভুক্তির ফলে এই অঞ্চল জুড়ে সামাজিক সংহতি এবং সংঘাত প্রতিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত শরণার্থী সংকটের দীর্ঘমেয়াদী, কম এবং তাৎক্ষনিক প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পে ইউএসএআইডি ৭০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, আপনি যখন খাগড়াছড়ির কারও সঙ্গে পরিচিত হবেন এবং তাকে রেস্তোরাঁয় নিয়ে যাবেন আপনারা কিন্তু একজন আরেকজনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। সুতরাং আমাদের প্রজন্ম যেভাবে ফাস্টফুডের সঙ্গে সহজে যুক্ত হতে পারছে, আমরা যদি নিরাপদ পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাগুলোকে প্রমোট করি, নতুন প্রজন্ম তাহলে সমাজে পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজার এবং পার্বত্য অঞ্চলকে নানা কারণে সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। আমাদের এসব অঞ্চলকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখা উচিত। বছরের পর বছর ভুরাজনৈতিকভাবে সংঘাত পূর্ণ জায়গা নিয়ে এসব অঞ্চলকে সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্য ভাগে যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো হয়, যেখানে সত্যিকার অর্থে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা হয়, সেগুলোকে সেদেশের সম্পদ হিসেবে দেখা উচিত।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটির ৬৩ শতাংশ, বান্দরবানে ৬১ শতাংশ এবং খাগড়াছড়ির ৭৮ শতাংশ মানুষের কাছে পানি পৌঁছানো হয়েছে। এই পরিসংখ্যান যদি সত্য হয় তাহলে এখনও একটি বড় অংশ পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এর পেছনে অনেক কারণে একটি হচ্ছে ভৌগলিক অবস্থান। আমাদের প্রাকৃতিক বন থাকলে তাদের আছে পাহাড়ি ঝিরি। আমরা যখন বাণিজ্যিক উপায়ে চাষাবাদ করছি তখন পাহাড়ি ঝিরিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে মাইলের পর মাইল হেটে এক বালতি পানি সংগ্রহ করতে। তারা কিন্তু ঢাকার মতো সমান রাস্তায় চলাচল করে না, তাদেরকে পাহাড়ি খাড়া রাস্তায় চলাচল করতে হয়। এটি পাহাড়ি এলাকার নারীদের জীবন অতিরিক্তভাবে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে।
উপদেষ্টা বলেন, ফেসবুকে অনেক নারী উদ্যোক্তা শাড়ি বিক্রি করেন। আমি বলতে পারি সেখানে ৫০-১০০টি ফেসবুক পেইজ আছে যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী মনিপুরীদের শাড়ি বিক্রি করে। আমি আশা করি এই প্রকল্প একটি ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে। মূল্য দিলে অনেক ভালো ফলাফল এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এই জনগোষ্ঠী যেসব পণ্য বানায় তাদের সঙ্গে ডিজাইনার যারা আছেন তারা যদি যুক্ত হতে পারেন, তাহলে কিন্তু অনেক সুন্দর সুন্দর পণ্য তৈরি হতে পারে। আমরা জানি মনিপুরী যেমন বাংলাদেশে আছে তেমন ভারতেও আছে। বিগত সময়ে ভারত মনিপুরী শাড়িতে তাদের ডিজাইন এবং বুননে যেসব পরিবর্তন এনেছে আমরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। আমি মনে করি এই প্রকল্প এগুলো ক্ষেত্রেও সুযোগ তৈরি করবে।
ফার্মের মুরগি আমি খুব ভয় পাই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফার্মের মুরগির খাবারে নাকি অ্যান্টিবায়োটিক থাকে। আর দেশি মুরগি পাওয়া খুব কঠিন, কারণ পাকিস্তানি রোস্টের মুরগি দেশি বলে বিক্রি করা হয়। আপনারা জানেন, তরুণ কিছু উদ্যোক্তা পাহাড়ি মুরগি বিক্রি করে। আমি এরকম ২০ জনকে চিনি যারা পার্বত্য অঞ্চল থেকে পাহাড়ি মুরগি সরবরাহ করে। সেগুলো নিরাপদ। এই প্রকল্প যদি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য বাজার সম্প্রসারণ করতে চায় এবং তারা যদি তাদের স্থানীয় পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হাবের সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে এই প্রকল্পে এটি আলাদা গুরুত্ব বহন করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি এনন জ্যাকবসব, ফ্রেন্ডস অব ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের সভাপতি ড. মানজুর আহমেদ, ইউএসএআইডী’র চীফ অব পার্টি ত্রিনা বিশপ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার এবং কমিউনিটি প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর স্থিতিশীলতা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।