reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

নিষিদ্ধ ঘোষণা সত্ত্বেও পলিথিন ব্যবহার

বাজারের জন্য পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়ে বেশ সোচ্চার অন্তর্বর্তী সরকার। অক্টোবরে সুপারশপ এবং নভেম্বর থেকে বাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি। কাঁচাবাজারে ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক মাস আগেই সরকার এই ঘোষণা দিয়েছিল। নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় চলছে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকে জানান, কাঁচাবাজারে পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি তারা শোনেননি। আবার অনেকে বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়ে তারা জানলেও বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হয়। নভেম্বর মাসের শুরু থেকে অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও বাস্তবে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। যদিও এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু পলিথিন বহনকারী ট্রাক ও পলিথিন জব্দের তথ্য জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। পলিথিনবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে কোথাও কোথাও বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে কর্মকর্তাদের।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই মাসে পুরান ঢাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বাধার মুখে অভিযান স্থগিত করতে হয় সরকারি কর্মকর্তাদের। কারখানার শ্রমিক-মালিকরা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদ করতে থাকেন।

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনায়, ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। সে সময় বাংলাদেশ ছিল এমন পদক্ষেপ নেওয়া বিশ্বের প্রথম দেশ। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের বিবেচনায় বাংলাদেশে পলিথিন ব্যবহারের শুরুটা অনেক পরের দিকে শুরু হয়েছিল। আইন করে নিষিদ্ধ করাটা কাজেও এসেছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোটামুটি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার সেভাবে দেখা যায়নি। এরপর ধীরে ধীরে নজরদারির অভাবে বাজারে জায়গা ফিরে পায় পলিথিন।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থার একটি হিসেবে প্রতিদিন ঢাকা শহরেই সাড়ে চার কোটি পলিথিন ব্যাগ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন তাদের ওপরই বিষাক্ত রাসায়নিকের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বেশি পড়ে।

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. শাহরিয়ার হোসেন মনে করেন, যেটি আগে থেকেই নিষিদ্ধ সেটি আইনের প্রয়োগ না থাকার কারণেই বিস্তার হয়েছে এবং বর্তমানে আইনের প্রয়োগে বাধা সৃষ্টিটাও রাজনৈতিকভাবে সরকারকে অপ্রস্তুত করতে করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে তো চ্যালেঞ্জ আসবেই কিছু সুবিধাবাদী লোকজন তো এটা করতেই চাইবে, তারপরও ক্ষতির দিক বিবেচনায় আইনের প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারে ২০১০ সালে আরেকটি আইন করা হয়। যদিও আইন প্রয়োগের অভাব এবং বিকল্প ব্যবস্থার সংকটে পলিথিনের ব্যবহার রোধ করা যায়নি। তবে পলিথিন বন্ধের ব্যাপারে সরকারি তোড়জোড়ের কথা যতটা শোনা গেছে, বাস্তবে বাজারে বা যেসব স্থানে পলিথিন বিক্রি করা হয়, সেসব স্থানে অভিযান তেমন দেখা যাচ্ছে না। ফলে সুপারশপগুলোয় পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হলেও খোলাবাজারে এখনো প্রকাশ্যেই পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে।

পলিথিন নিষিদ্ধের ব্যাপারে একটা প্রশ্ন অনেক সময়েই ঘুরে ফিরে আসে, সেটি হচ্ছে এর বিকল্প কী? নভেম্বর মাসেই যখন বাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ থাকার কথা, তখনো দেদার পলিথিনের ব্যবহার দেখা গেছে। যারা ক্রেতা তাদের বড় অংশই সরকারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সহজলভ্য কোনো বিকল্প না থাকার কথা উল্লেখ করেন। বনশ্রী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা ডালিম জানান বিকল্পের ঘাটতির কথা। ‘মাংসটা, মাছটা, পলি ছাড়া ক্যামনে নেব? পলিথিন কোম্পানি বন্ধ করে দেক, আমরা পাইতাম না, শেষ! কাস্টমার ব্যাগ নিয়া আসবে, আমরা দেব।’ তিনি বলছিলেন, ‘পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কিন্তু তার পাশাপাশি বিকল্পও আনা দরকার। বিকল্প বাজারে না এনেই যদি পলিথিন আমরা বন্ধ করে দেই তাহলেও সমস্যা বলছিলেন বাজার করতে আসা সায়েম।’

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক্ষেত্রে উল্লেখ করেন, ১৯৯৫-৯৬ সালের আগে পলিথিন না থাকার কথা। সেসময় বাড়ি থেকে চট বা পাটের ব্যাগ নিয়ে মানুষ বাজারে যেতেন যেটা ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা হতো। সমস্যা হচ্ছে এতটা কম খরচে সহজ বিকল্প এখনো নেই। মাঝে পাট থেকে তৈরি সোনালি ব্যাগ নিয়ে আশার জায়গা তৈরি হলেও বাজারে সেসব ব্যাগ কখনো সেভাবে দেখা যায়নি। তবে ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যখন কড়াকড়ি ছিল তখন বিকল্প উপায়েই বহন করা হতো।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close