দেশে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে : তথ্য উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বললেন, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টার পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে ।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে একটা অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। একদিনে এতগুলো ঘটনা কাকতালীয় হতে পারে না। এই ইন্ধনের পেছনে কারা জড়িত আমরা তা তদন্ত করছি। ইন্ধন রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
এতগুলো ঘটনা তো কাকতালীয় নয়
চলমান অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। বড় কোনও পরিকল্পনা না থাকলে এক দিনে এতগুলো ঘটনা এটা তো কাকতালীয় নয়। আমরা মনে করছি, এখানে নানাপক্ষের পরিকল্পনা আছে। সরকার সফলভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করুক— এটা অনেকে হয়তো চাচ্ছে না। আমাদের যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, তারা তো নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, পুলিশে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। প্রশাসনের স্থবিরতাও কাটানোর জন্য প্রশাসনেও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছি। এই বিষয়গুলো নস্যাৎ করতে আমাদের অনেক বেশি এসব ঘটনায় ব্যস্ত রাখার জন্য, সারা দেশের দৃষ্টি এদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা না আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা এটা তদন্ত করছি। দেশে বা দেশের বাইরে ইন্ধনে কারা জড়িত। একটি অভ্যুত্থান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা আছি। সবার ভেতরে বিপ্লবী চেতনা আছে। উত্তেজনা আছে। সেটা যাতে আমরা ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করি। জনগণের কাছে সেই আহ্বান করবো। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে অনুরোধ করবো— এ ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য। গণঅভ্যুত্থানে যে ঐক্য আমাদের মধ্যে ছিলে, সরকারের কিন্তু অংশীদারত্ব সবারই রয়েছে। সেজন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা সবার কাছে প্রত্যাশা করছি।
ইন্ধন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, অনেক ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করার আগ পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। আমরা তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
পুলিশের দুর্বলতা ছিল
ছাত্রদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা গেলো না, এক্ষেত্রে পুলিশের কোনও দুর্বলতা রয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তো পুলিশের দুর্বলতা ছিল। আমরা স্বীকার করছি, দুর্বলতা ছিল দেখেই ঘটনাটা সংঘর্ষের দিকে গেছে। কিন্তু পুরো পুলিশ তো একটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সেই জায়গায় এত এত শিক্ষার্থী নেমে এসেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলে সেটা আরও বেশি খারাপের দিকে যেতে পারতো। এ কারণে প্রাথমিকভাবে হয়তো পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা সংঘর্ষে জড়ায়নি। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এক হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। পুলিশকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে রদবদল করা হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে। যেখানে ব্যর্থ হবে সেখানে পরিবর্তন আনা হবে।
পরিস্থিতি কেন পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, রায়ট নিরসন করার অতীতে প্রাকটিস ছিল— সেটা করা হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারতো। এজন্য পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে সেই বাধা টপকিয়ে ছাত্ররা চলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও অ্যাকশনে যায়নি। যারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়ট মোকাবিলায় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটা পরিহার করে সরকার আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থার গ্রহণ করতে চাচ্ছে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, রায়ট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আগে প্রথমেই চলে যেতো ফায়ারিংয়ে, এই রায়ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পরিবর্তন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। নতুন নেতৃত্বে যারা এসেছে তারা সেভাবে প্রশিক্ষণ দেবে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে যেখানে পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে বা তাদের গুলি করতে হয়। সেজন্য পুলিশকে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদেরকে দেশ গড়ার জন্য প্রতিটি সেক্টরকে সংস্কার আনার জন্য সময় দিতে হবে। আমরা সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান করছি। সহিংসতার দিকে না গিয়ে গঠনমূলকভাবে এগুতে হবে।
গত কিছুদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন কলেজে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছি— যাতে কোনও উসকানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধারণ করে। তাদের দাবির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সরকার অংশীভূত হতে পারে। এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।
‘নিহত হওয়ার কোনও সংবাদ আমরা পাইনি’
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ঘটনা ছয়দিন আগ থেকে সূত্রপাত হয় বলে জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা দেখেছি, তিনজন নিহত হওয়ার একটি খবর রটেছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কারও নিহত হওয়ার কোনও সংবাদ আমরা পাইনি। নানা মাধ্যমে চেষ্টা করেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠিত কোনও গণমাধ্যমেও এই ধরনের খবর আমরা পাইনি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, অনেকেই আহত হয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন— এটি আমরা জানতে পেরেছি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কারা কারা জড়িত, ভাঙচুরসহ আহতের বিষয়গুলোতে অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনাকে আর কোনোভাবেই টলারেট করা হবে না। আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কোনও ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে। কোনোভাবেই যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ না হয় এবং নিজেদের মধ্যে যাতে সংঘর্ষ না হয়। সেজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছিল, কিন্তু কোনোভাবেই সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি।
যে ঘটনাটা হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকেই সতর্ক ছিল। তবে রায়ট মোকাবিলায় যে যে স্টান্ডার্ড প্রটোকল ছিল, জনগণের প্রত্যাশার কারণে আমরা সেখান থেকে সরে আসছি। পুলিশ কাউকে লাঠিচার্জ করুক— এটা এখন কেউ দেখতে চান না। আজকে ছাত্রদের ঘটনা বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে যে ঘটনাটা হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত।
তিনি বলেন, চিন্ময় দাস গ্রেফতারের বিষয় যেটা জানি তিনি আটক হয়েছেন। ওনার নামে কোতোয়ালি থানায় মামলা আছে। এ বিষয়ে ডিএমপি বিস্তারিত জানাবে।
ঘটনাবহুল দিন কেটেছে
ঘটনাবহুল দিন কেটেছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ঋণ দেওয়ার নাম করে অহিংস গণঅভ্যুথানের ব্যানারে ভোররাত রাত থেকে ঢাকায় বাস-মাইক্রোবাসে করে সাধারণ মানুষদের নিয়ে আসা হয়। তারা মিথ্যা প্রচারণা করে মানুষকে নিয়ে আসে। তাদের আহ্বায়ককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি যে মিথ্যা তা মানুষকে বুঝানো হয়েছে।
‘পত্রিকা অফিস ভাঙচুর ও বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ সমর্থন করি না’
দৈনিক প্রথম আলো নিয়ে উত্তজেনার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজশাহীতে সোমবার তাদের অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে— কোনও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে জনগণের কোনও অংশের অভিযোগ ও ক্ষুব্ধতা থাকলে, তা প্রকাশ করতে পারে। তবে সেটি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। কোনও পত্রিকা অফিস ভাঙচুর করা ও বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা আমরা সমর্থন করি না। এ ধরনের ঘটনা পরবর্তী সময়ে ঘটলে টলারেট করা হবে না। ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা জনগণকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অংশ না নিতে আহ্বান জানাবো। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এরকম কর্মকাণ্ড থেকে আমরা যেন বিরত থাকি।