গাজী শাহনেওয়াজ, আজারবাইজান (বাকু) থেকে
জলবায়ু সম্মেলনে ড. ইউনূস
মানবসৃষ্ট সংকট থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে
জাতিসংঘের আয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে শুধু নিজ দেশ নয়, ভারত, নেপাল ভুটানসহ গ্লোবাল সাউথের (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার) ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পূর্ব ইউরোপরে দেশ- আজারবাইজানরে বাকুতে অনুষ্ঠতি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনরে ২৯ তম আসরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার বিশ্ব নেতাদের সামনে এসব দিবি তুলে ধরেন।
এ অধ্যাপক বিশ্ব নেতাদের উদ্দশ্যে বলেন, জলবায়ুর সংকট দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মানবসৃষ্ট এই সংকট থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে। এর জন্য এখনই কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বছর ৬টি বড় বন্যা হয়েছে। আমরা গত ৪০ বছরে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষ্মীপুরসহ এ জায়গায় আমরা কোনোদিন বন্যার কথা শুনিনি। এমন অনেক জলবায়ু ঝুঁকি আসছে যেগুলোর চিন্তাও আমাদের ছিল না। এবার এপ্রিলে পুরো মাস জুড়ে আমাদের দেশে হিট ওয়েভ হয়েছে। এটি আমাদের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এজন্য ক্ষতিপূরণে আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তার বিপরীতে আমরা তেমন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না৷ আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩.৫০বিলয়িন ডলারের অনুদান পেয়েছি। ঋণ হিসেবে আমরা পেয়েছি ২৫৮ মিলিয়ন ডলার। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি। দেশগুলো যে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ায় এবং গ্লোবাল নর্থে যে সভ্যতা গড়ে তোলা হয়েছে তার দায় যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। বাংলাদেশসহ গ্লোবাল সাউথের সবাই সেটার ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হচ্ছে৷
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বলেন, আমরা যে যে সংস্কৃতিটা দাঁড় করিয়েছি, সেটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ কার্বন ফুট প্রিন্ট তৈরি করি সে জায়গাটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একটা স্থায়ী জীবনযাপনের দিকে যেতে হলে নতুন উদ্যোক্তার দিকে জোরি দিতে হবে, তাহলেই একটা নতুন সংস্কৃতি করতে পারব। জলবায়ু পরবির্তনের ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে তার জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থায়ন জরুরি অর্থায়নটা হয়। আমাদের যে একটা অনুমান করা হয়েছে আমরা পাচ্ছি ৩ বিলিয়ন ডলার,কিন্তু আমরা ক্ষতির শিকার হচ্ছি ১২ বিলিয়ন ডলার। সে জায়গায় আমাদের সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। এই অর্থটা আসবে কোথা থেকে? আমরা তো এত ধনী দেশ না বা আমাদের কার্বন ফুট প্রিন্টও এতো না। বাংলাদেশের নিট কার্বন ফুট প্রিন্ট হচ্ছে শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ। বিশ্বে যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, পৃথিবী যে একটা হুমকির মুখে রয়েছে সে জিনিসটা তারা সরাসরি অস্বীকার করছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে ১ বিলিয়নের বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা অন্যান্য জেলার অনুমানই করতে পারিনি। এগুলো ধীরে ধীরে হচ্ছে৷ এটা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকি কীভাবে এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকরা আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনটি এমন স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা তেল শিল্পের জন্মস্থান বলে পরিচিত। সোমবার সন্ধ্যায় কপ-২৯ এ অংশ নিতে বাকুতে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা।