জহির রায়হান, কাউনিয়া (রংপুর)
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী সৌরভের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সৌরভের চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার কৃষক বাবা ওসমান। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে তার সুচিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা না পেলে হয়তো তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) মিরপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজীব শটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোঃ ওসমান গনির ছেলে সৌরভ ইসলাম (২৭)। বর্তমানে তিনি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যথা ও যন্ত্রণায় ছটফট করে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় তিনি সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী সৌরভ ইসলাম বলেন, ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে আমি হেমায়তপুরের ছাত্রবাস থেকে বের হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয় মিরপুর ক্যাম্পাসের দিকে যাই। সেখানে গিয়ে জোট হয়ে মিরপুর গোল চত্বরের দিকে আসি তখন পুলিশ ও সশস্ত্র ছাত্রলীগ বাহিনীর সঙ্গে আমাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে ওই দিন বিকালে মিরপুর -১০ এর সামনে আমরা মিছিল করে আসতে থাকলে পুলিশ ও ছাত্র লীগের সশস্ত্র বাহিনী গুলি ছোঁড়ে। আমরাও আত্মরক্ষার জন্য তাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করি। তারা চতুর্দিক আমাদের ঘিরে ফেলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকলে অনেকের সঙ্গে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। আমার ডান পায়ের হাঁটুর সাইড দিয়ে গুলি ঢুকে বের হয়ে যায়। এতে পায়ের হাড় ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। সেখানে প্রচুর রক্তক্ষণ হতে থাকে। পরে অচেনা এক ছাত্র ভাই ও রিকশাওয়ালা এক মামা আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রিকশায় তুলে মিরপুর শেওড়াপাড়া আল হেলাল হাসপাতালে এবং পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ইবনে সিনা হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করে । সেখানে আমার ডান পায়ের ভিতরে পাইপ ও লোহার খাঁচা (রিং) পরানো হয়। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। কিন্তু আমার এ অবস্থার পর নিমিষেই আমার চাকরি চলে যায়। আমার মায়ের সোনার গহনা বানানোর জমা টাকা খরচ করে আমার চিকিৎসা করান বাবা। ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের বেড ভাড়া আর কিছু ওষুধপথ্য ফ্রি পেলেও চিকিৎসার অধিকাংশ খরচ তাদের নিজেদের করতে হচ্ছে। ডাক্তার যে খাবার তালিকা দিয়েছে সে খাবার আমি অর্থের অভাবে খেতে পারছি না। তাই আমার হাড়ের ফাটল জোড়াও লাগছে না। বর্তমানে আমার পায়ে প্লেট বসিয়ে দুই টি স্ক্রু লাগানো আছে, যা পরে সার্জারি করে বের করতে হবে।
ডাক্তার বলেছেন, আমার পায়ের চিকিৎসা অনেক দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে আমার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সম্ভব হলে বাইরের দেশে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। এজন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। আমার বাবা সামান্য একজন কৃষক । আমরা ৪ ভাই ৩ বোনসহ মোট ৭ ভাই বোন। আমি সবার ছোট। আমাকে অনেক কষ্টে বড় স্বপ্ন নিয়ে বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান আমার বাবা । কিন্তু মাঝপথে এসে আমার জীবনে এ করুণ পরিণতি ঘটবে তা আমার জানা ছিল না। তবুও মনে প্রশান্তি পাই, যে স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছিলাম সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এদেশে স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে। বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। নতুন প্রজন্ম সুস্থ-সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার পাবে।
আমার বাবা ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে এবং কয়েকজনের আর্থিক সহায়তায় আমি বর্তমানে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কল্যাণপুরে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছি। সেখানে দুই বেলা ফিজিওথেরাপি দিতে হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদি এ থেরাপি দিতে হবে, যা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। এখন অর্থের অভাবে ওষুধপত্র কিনতে পারছি না। তাছাড়াও একটি অপারেশন বাকি আছে তার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকার দরকার কিন্তু কে দেবে এ টাকা।
সৌরভের বাবা কৃষক ওসমান গনি বলেন, আমার ছেলে গণতন্ত্র ও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ব্যথা যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে ছটফট করছে। এখন তার উন্নত চিকিৎসা ও অপারেশন করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন কিন্তু আমি এ টাকা পাবো কোথায়। শুনেছি, সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করছেন। কিন্তু আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য কেউই খোঁজ খবর নিচ্ছে না। তিনি তার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবান মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করেন।
পিডিএস/এমএইউ