নিজস্ব প্রতিবেদক
১ অক্টোবর থেকে বিমানবন্দর এলাকা হর্ন-প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা
আগামী ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া হর্ণমুক্ত করা হবে বিমানবন্দরের আশপাশের সড়ক।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেবিচকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মাদ কাউছার মাহমুদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মূলত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সার্বিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, ঢাকা ট্রাফিক, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তর, এপিবিএন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে পানির জন্য ফিল্টার, কাচের জগ/গ্লাস বা স্টেইনলেস স্টিলের গ্লাস ব্যবহার; প্লাস্টিক ফোল্ডারের পরিবর্তে পুনঃব্যবহারযোগ্য কাগজ বা উপকরণের ব্যবহার; কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবস্থা করে খাবার পরিবেশন; পাটের ব্যাগ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ; প্লাস্টিকের ডাস্টবিন ও পলিথিনের ব্যবহারের পরিবর্তে স্টেইনলেস স্টিলের বিন ও বায়োডিগ্রেডেবল বা পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার বৃদ্ধিকরণসহ ইত্যাদি।
সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় সাইনেজ ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানানো হবে। এছাড়া আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে, যা নিয়মিতভাবে কার্যকর থাকবে।
এ পদক্ষেপসমূহ মানুষদের সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত করবে ও তা ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করবে। বেবিচকের পৃথক একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায় যানবাহনের হর্ন বন্ধে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, ঢাকা ট্রাফিক, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তর, এপিবিএন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থা এই সমন্বিত উদ্যোগের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে নিজ নিজ কর্মপরিধি অনুযায়ী গৃহীত উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়ন করবেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিকে লো মেরিডিয়ান থেকে উত্তর দিকে স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— বিমানবন্দর এলাকাকে হর্ন মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা; সব স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি স্থাপন; লিফলেট বিতরণ; ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম; যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ; হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে যথাযথ পার্কিং; বিআরটিএ এর মাধ্যমে গাড়ি চালক ও মালিকদের ক্ষুদে বার্তা দেওয়া, আইন অমান্যকারীদের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। শব্দদূষণ রোধে হর্ন বাজানোকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন স্থানে থাকবে, যাতে চালকরা সহজে দেখতে পায়। রাতের বেলায় সাইনগুলো দৃশ্যমান রাখার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে ডিএনসিসি।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি শব্দ দূষণ রোধে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমিতির পক্ষ থেকে সব বাস ও ট্রাক চালকদের শব্দদূষণ না করার জন্য সচেতন করার উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট টার্মিনালগুলোতে শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন লিফলেট বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে ট্রাক ও বাস চালকদের মধ্যে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া, ১ অক্টোবর থেকে আগামী ৭ দিনের জন্য লা মেরিডিয়ান থেকে উত্তর দিকে স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে। লা মেরিডিয়ান এ পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেটরা, বিমানবন্দরের সামনের গোলচক্করে বেবিচকের ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং স্কলাস্টিকা পয়েন্টে বিআরটিএ এর ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ, ভলানটিয়ার, শিক্ষার্থী ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা তাদের সহযোগিতা করার জন্য থাকবে।