নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ আগস্ট, ২০২৪

মানুষ এক, অধিকারও এক এখানে পার্থক্য নেই : প্রধান উপদেষ্টা 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘অধিকার সবার সমান। এ দেশের মানুষ হিসেবে অধিকার আদায়ে বিভক্ত হয়ে নয়, আমরা এক মানুষ, এক অধিকার; এর মধ্যে কোনও পার্থক্য করবেন না। আমাদের একটু সাহায্য করুন। ধৈর্য ধরেন, কিছু করতে পারলাম কী পারলাম না, সেটা পরে বিচার করবেন। যদি না পারি আমাদের দোষ দিয়েন।’

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় হঠাৎ করেই ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা। তাকে স্বাগত জানান হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এসব কথা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাঙ্ক্ষা, সেখানে আমরা মুসলমান, হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ হিসেবে নই, মানুষ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক সবার। সব সমস্যার গোড়া হলো, আমরা যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলো করেছি; সব কিছু কিন্তু পচে গেছে। এই কারণেই গোলমাল হচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলো ঠিক করতে হবে।’

হঠাৎ এই পরিস্থিতিতে মন্দির পরিদর্শনে আসার কারণ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বড় রকমের বিভেদের আওয়াজ শুনছি। বিমানবন্দরে নেমেই যেটা বলেছিলাম, এমন বাংলাদেশ আমরা করতে চাচ্ছি; যেখানে আমরা এক পরিবার। এটা হলো মূল জিনিস। পরিবারের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা, বিভেদ করা, এটার কোনও প্রশ্নই আসে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এটা নিয়ে যেন আর কোনও বাদ-বিবাদ না হয়।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে কেউ বিচার পাবে না কেন? আইনে কি বলা আছে এই সম্প্রদায়ের হলে এই আদালতে যাবে, ওই সম্প্রদায়ের হলে ওই আদালতে যাবে? আইন একটা, কার সাধ্য আছে সেখানে বিভেদ করে এর রকম একটা, ওর রকম একটা। এটা হতে পারে না।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা (সাম্প্রদায়িকতা) একটি রোগ, এর মূলে যেতে হবে। আপনারা যদি বলেন, আমাদের সংখ্যালঘু হিসেবে এটা বলছে, এটা হলো মূল সমস্যা থেকে আপনারা দূরে সরে যাচ্ছেন। আমাদের বলতে হবে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেটা পেলে আমাদের বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যেগুলো আছে, আমরা নতুন কিছু বলছি না। আমাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যদি টেনে নিয়ে আসেন আমি অমুক, আমি তমুক; আবার পুরনো খেলায় চলে গেলেন। আপনাদের শিকার করার জন্য যারা বসে আছে, তারা এগুলো শিকার করে। আপনারা বলবেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমার সাংবিধানিক অধিকার এই, আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন, আর কিছু চাইবেন না আপনারা।’

গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনি শুনবেন না বা খোঁজে পাবেন না গ্রামীণ ব্যাংকের কাজের ক্ষেত্রে আমরা হিন্দু পাড়া বলে বাদ দিয়ে মুসলমান পাড়ায় গিয়েছি। একসঙ্গে গিয়েছি, একভাবে গিয়েছি। আমাদের মূল কাজটায় যেতে হবে। আপনাদের অনুরোধ, আপনারা বিভিন্ন খোপের মধ্যে চলে যাইয়েন না। এই খোপ হলেই মারামারি-কাটাকাটি লেগে যাবে। একত্রে আসেন, সবার জন্য এক আইন। এক অধিকারের জন্য কাজ করি।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close