reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা অসাধ্য নয় : সিইসি

ছবি : সংগৃহীত

পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপে বসলে তার মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

একইসঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের সংঘাত ও সহিংসতা পরিহার করে সমাধান খুঁজতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার শুরুতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন প্রশ্নে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই মতৈক্য ও সমাধান প্রয়োজন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তুলে ধরে সিইসি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আগ্রহী সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ একাধিক অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের মতামত শুনেছি। আমাদের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছি। সংলাপে অনাগ্রহী নিবন্ধিত দলগুলোকেও একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আমাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে; বিশেষত নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্নে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ রয়েছে। বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তাতে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মতৈক্য ও সমাধান প্রয়োজন। আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব যে, সংঘাত-সহিংসতা পরিহার করে সমাধান অন্বেষণ করুন।’

এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হলে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান সিইসি।

ভাষণের শেষের দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ঘোষিত তফসিলঅনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে আগামী ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি হবে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে দুই মেরুতে দেশের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচিতে আছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে সংবিধান মেনেই নির্বাচন চায় ক্ষমতাসীন জোটসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল।

এই অবস্থায় সমঝোতার জন্যও তাগিদ দিচ্ছে নানা মহল। বড় তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়ে ‘পূর্বশর্ত ছাড়া’ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি।

ডোনাল্ড লু'র চিঠির বিষয়ে বিএনপি মুখ না খুললেও জাতীয় পার্টি বলছে, সংলাপ ছাড়া ভোটের মাঠে নামবেন না তারা। আর সংলাপের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রশ্ন, তারা আলোচনায় বসবেন কাদের সঙ্গে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মহল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও এই মুহূর্তে সেরকম সম্ভাবনা কম।

২০০৬ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের সংলাপ হয়েছিল। সেই সংলাপ সফল হয়নি। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েক দফা সংলাপ হয়েছিল। কিন্তু সেসব সংলাপেও কোনো কার্যকর ফল আসেনি।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিইসি,সমঝোতা,সংলাপ,নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close