নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ
নবায়নযোগ্য বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ-পরবর্তী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের শিল্প-কারখানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ ও নীতি সংস্কার করার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলানায়তনে ‘বাংলাদেশের শিল্পখাত দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে উত্তরণ : চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণ এবং পরিকল্পনামাফিক কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জণের লক্ষ্যে চিরাচরিত জ্বালানির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন করাটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার তাই সংশ্লিষ্ট নীতিসমূহ প্রয়োজন হলে সংস্কার করবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামীতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উৎপাদনকেন্দ্র হওয়ার সব ধরনের সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং ইইউ’র বাণিজ্য শর্ত পূরণে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন হলে সরকারকে সংশ্লিষ্ট নীতি সংস্কার করতে হবে। সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার পরিবর্তন করতে হবে।’
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান দেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে শিল্পোদ্যোক্তাদের ইডকল থেকে ঋণ গ্রহণ করে রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের আহবান জানান। তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা এখান থেকে মোট খরচের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘শিল্প কারখানায় যেসব প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রয়েছে; সরকার তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা করছে।’
দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ১০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে জানিয়ে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘সোলার বা নাবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বর্তমানে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সবমিলিয়ে ১০৮ প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে; এর সবগুলো বাস্তবায়ন হলে, প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন করা যাবে। এ ছাড়া আগামী ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়া যাবে।’
সরকারের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের একটি বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতি বছরের অক্টোবরে চালু হবে। সেখান থেকে ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মোংলা ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় আরো ২টা বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘কার্বন নির্গমন হ্রাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইমিশন ট্রেডিং স্কিম (ইটিএস) চালু রয়েছে, যা প্রথমবারের মতো এবছর থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হচ্ছে। এখানে স্থানীয় উৎপাদনকারী এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানের উৎপাদনকারীকে সমানভাবে কার্বন কর পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপান ইটিএস চালু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর ইইউ যদি পোশাক শুল্ক সুবিধা অব্যাহত না রাখে, তাহলে পোশাকের ওপর আমাদেরকে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ ট্যারিফ দিতে হবে। এর সঙ্গে যোগ হবে ৭ থেকে ৮ শতাংশ কার্বন কর, ফলে তখন মোট ১৮ থেক ১৯ শতাংশ হারে ট্যারিফ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, এইড পার্টনার বা ক্রেটিড রেটিং এজেন্সিগুলো কার্বন নিঃসরণের ওপর নজর দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ‘যেসব কারখানা নিজেরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাচ্ছে, তাদের ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কারখানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার মনিটারিংয়ের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট সংস্থা গঠন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আলী আহম্মেদ শওকত প্রমুখ।
পিডিএস/এএমকে