জিয়াউদ্দিন রাজু
২০২৩-২৪ বাজেট
বাজেট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহায়ক : আওয়ামী লীগ
উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ২৪ বারের মতো বাজেট উত্থাপন করেছে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন সরকারের ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। আর ২০২৩ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার (টানা ১৫ বার) ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করল।
বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে। প্রস্তাবিত বাজেটকে বিশ্বমন্দা-পরবর্তী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট বলে মনে করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ সালের বাজেট উপস্থাপন করার পর আলাপকালে দলটির উচ্চপর্যায়ের নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে দেশের জনগণ। এ দ্বারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার এই বাস্তবমুখী বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা। রাজধানীজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল ও আনন্দ শোভাযাত্রা করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে জনবান্ধব বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাজেটটা এমনভাবে করা হয়েছে যে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে এ বাজেটটি প্রণীত হয়েছে।
২০২৩-২৪ সালের বাজেটকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহায়ক বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দা, সে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার সময় উপযোগী বাজেট দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এই বাজেটের মাধ্যমে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট নগরায়ণ এবং স্মার্ট জনগণ গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্তের মানুষ যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। নানক আরো বলেন, এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহারের মাধ্যমে যে ওয়াদা করেছিলেন, এই বাজেট সেই ওয়াদা বাস্তবায়নের অংশ। দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী একটি স্মার্ট রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার এ বাজেট জাতির কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই বাজেটে দেশের ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত সবাই উপকৃত হবেন।
বাজেটের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এবারের বাজেট গণমুখী এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বাজেটের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও সুরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, যা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। বাজেটে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে বলে মনে করেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস অভিঘাত ও বিশ্বমন্দার যে প্রভাব রয়েছে তা থেকে কাটিয়ে ওঠার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট নগরায়ণ এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তুকির চাপ সামাল দেওয়াসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। জনবান্ধব ও উন্নয়নবান্ধব এই বাজেটকে আমরা স্বাগত জানাই।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল ও আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও ছাত্রলীগ। এদিন বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা হয়েছে। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ মিছিল ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহিসহ মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণমুখী বাজেট দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান বক্তারা।
একইদিন বিকেলে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের টানা ১৫তম বাজেট পেশ উপলক্ষে রাজধানীতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। গুলিস্তান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের হয়ে আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের সেখানেই শেষ হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে শুক্রবার (২ জুন) সকাল ১১টায় দলের কার্যালয়ের সামনে আনন্দ মিছিল করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসন রিপন। এছাড়া আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এতে অংশ নেন সংগঠনের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহানগর নেতারা। আনন্দ মিছিলটি বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
পিডিএসও/এমএ