নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৩
ডেইরি আইকন পুরস্কার পেলেন ৪১ খামারি-উদ্যোক্তা
দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে খামারি ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে দুগ্ধ খাতে সফল দেশের ৪১ জন খামারি ও উদ্যোক্তাকে ডেইরি আইকন পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ব দুগ্ধ দিবস- ২০২৩ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ৪টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার প্রদান করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এর মধ্যে ডেইরি ক্যাটাগরিতে ২০ জন, দুধ ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৯ জন, পশুখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৮ জন এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ ক্যাটাগরিতে ৪ জনকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিটি পুরস্কারের আর্থিক মূল্য এক লক্ষ টাকা। সেই সাথে প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে ক্রেস্ট ও সনদ।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৩ উদযাপন ও ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, স্থায়ী কমিটির সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য ছোট মনির এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল এবং সহকারী এফএও প্রতিনিধি নূর আহমেদ খন্দকার। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। অনুষ্ঠানে ‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের উপকারিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রেয়াজুল হক। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ এবং ডেইরিখাতের উদ্যোক্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে দুধের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। দুধের ঘাটতি পূরণ করেপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে দুগ্ধ উৎপাদনে যে ঘাটতি আছে, সে ঘাটতি পূরণে যত্নবান ও তৎপর হতে হবে। এটাই হোক বিশ্ব দুগ্ধ দিবসে সবার প্রত্যয়।
তিনি আরও বলেন, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত এক সময় অবহেলিত ছিল। বঙ্গবন্ধুই প্রথম এ খাত সংশ্লিষ্টদের সম্মানিতকরেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন এ খাত সংশ্লিষ্টদের সম্মানিত না করলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে না।
দুধ একটি আদর্শ খাদ্য উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, দুধ পান না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মেধার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মানুষের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনসহ অন্যান্য উপাদান সবচেয়ে বেশি দুধের মধ্যেই রয়েছে।
উল্লেখ্য, টেকসই দুগ্ধ শিল্প: সুস্থ মানুষ, সবুজ পৃথিবী- এ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন করা হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন সকালে রাজধানীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ঢাকার ১১টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের দুধ পান করানো হয়। ঢাকার বাইরে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এতিমখানায় শিশুদের দুধ খাওয়ানো, কুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র্যালি, সভা, পুরস্কার বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১১ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে চারগুণ
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে গত ১১ বছরে দুধের উৎপাদন প্রায় সাড়ে চারগুণ বেড়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দুধের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করার প্রয়োজনে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তোলায় সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ১৩০ দশমিক ৭৪ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০১০-২০১১ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে চারগুণ বেশি। ফলে প্রতিদিন জনপ্রতি প্রাপ্যতা ২০৮ দশমিক ৬১ মিলিতে উন্নীত হয়েছে। বিগত এক যুগে কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ডেইরি স্টকের সংখ্যাগত উত্থান দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে দুধ উৎপাদনে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থিরমূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ৫০ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ (বিবিএস, ২০২১)।
গত এক যুগে খামারের আকার, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে, যা খামারের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি মিল্ক ও মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বের ৪০ শতাংশ দুধ উৎপাদন হয় এশিয়া মহাদেশে। এর মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী দেশ ভারত। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও রাশিয়া। তবে এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান নেই বাংলাদেশের।
দুধ পাওয়ার পর যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে বড় কোম্পানিগুলো। কিন্তু খামারি পর্যায়ে এ বিষয়ে ধারণা কম থাকায় এবং ব্যবস্থাপনা না থাকায় যথাযথভাবে দুধ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মেশিনারিজের অভাবে অনেক সময় কোম্পানিগুলোর কাছেও দুধ পৌঁছায় না। দেশের দুধ উৎপাদক কোম্পানিগুলো ১০-১৫ শতাংশ দুধ ব্যবহার করতে পারে। বাকি সব দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। ফলে বিভাগভিত্তিক প্রসেসিং প্ল্যান্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।