নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ মে, ২০২৩

মার্কিন ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়া 

যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করল সরকার 

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থন জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে নতুন মার্কিন ভিসা নীতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বুধবার (২৪ মে) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। ভিসা নীতির বিষয়ে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘৩সি’) ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ৩সি ধারা অনুযায়ী ভিসায় বিধিনিষেধের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণাটি নজরে নিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ৩ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসা নীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।

বাংলাদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের তথাকথিত ৩সি ধারা অনুযায়ী ভিসায় বিধিনিষেধের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণাটি নজরে নিয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার স্বার্থে দেশের সব স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে মার্কিন এই ঘোষণাকে বিবেচনায় নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল জাতি, যার কয়েক দফায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ধারাবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের মানুষ অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর ফলে ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখন একটি আন্তর্জাতিক রোল মডেল বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উত্তরণের যোগ্য হয়ে উঠেছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কারণে এটি অর্জিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। বাংলাদেশে কোনো সরকারের ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে, যে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের জন্য দলটিকে নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। সরকার সব ধরনের বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ সভা ও সমাবেশকে গুরুত্ব দেয়। সরকার মনে করে, স্থানীয় যে অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানে নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তাদের বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব অংশীজনকে নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনী সংস্কারের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে জারি করা ১ কোটি ২৩ লাখ জাল ভোটারের বিষয়টি সুরাহার জন্য ছবিসংবলিত ভোটার পরিচয়পত্র চালু করা হয়েছে। ভোটারদের পাশাপাশি ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের মধ্যেও আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালুর বিধান চালু হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) অব্যাহতভাবে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে গৃহীত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী, পুরো নির্বাহী প্রশাসন বাধ্যতামূলকভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থেকে কমিশনের নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালনে করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে যাতে আপস করতে না হয়, সে জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের আইনবহির্ভূত চর্চা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।

এতে বলা হয়, সরকার মনে করে, স্থানীয় যে অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানে নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তাদের বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অর্জনকে ধরে রাখা পুরোপুরি দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থন ও প্রশংসা করেছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মার্কিন ভিসা নীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close