নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ মার্চ, ২০২৩

ঈদের বাজারেও চড়া দাম, করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান ব্যবসায়ীরা

ছবি : সংগৃহীত

ঈদ মানেই নতুন পোশাক। ধনী-গরিব সবাই চায়, সাধ ও সাধ্য মতো নতুন পোশাক কিনে ঈদের আনন্দে সারাদিন মেতে থাকে। কিন্তু এবার সেই আনন্দও মাটি হয়ে যেতে পারে অনেকের। কারণ, নিত্যপণ্যের বাজারের আঁচ লেগেছে রাজধানীর পাইকারি মার্কেট ও শপিংমলগুলোয়। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের ‘পকেট কাটা’র অভিযোগ উঠছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাত তুলে রোজার শুরু থেকেই পোশাকের বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনাকাল ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে ৩ বছরের (২০২০, ২০২১ ও ২০২২) ঈদে আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। এর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। তাই এবারের ঈদে ৩ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে, না হলে আগামীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ঈদে পোশাকের শতকরা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ দাম বাড়িয়েছেন তারা।

রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মৌচাক-মালিবাগ এবং নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের চাহিদা মূলত গজ কাপড়, থ্রিপিস ও পাঞ্জাবিতে। এই তিনটির পাশাপাশি শাড়ি ও লেহেঙ্গা, গাউনসহ অন্যান্য পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। দোকানগুলোও গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সারিসারিভাবে সাজিয়ে রেখেছে দেশি-বিদেশি পণ্যগুলো। ক্রেতা দেখলেই হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নানান কথা ও অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্টের চেষ্টা করছেন তারা। তবে ক্রেতার পোশাক পছন্দ হলেই ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন। হাজার টাকার কাপড়ে ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মুনাফা করছেন। অর্থাৎ ক্রেতারা ২০২২ সালে যে পোশাক ১ হাজার টাকায় কিনেছেন। এবছর সেটা ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যারা দর-দাম কম করছেন না, তাদের আরো বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এক কথা করোনার কারণে ৩ বছর ব্যবসা করতে পারিনি। পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা ধরে রেখেছি, এবারের ঈদে পোষাতে হবে। অর্থাৎ তিন বছরের লাভ এবার করতে হবে।

মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, ঈদে পোশাকে শতকরা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে একদিকে ডলারের দাম বেড়েছে। এতে করে গত বছরের তুলনায় ডলার প্রতি ২০-২৫ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়া দোকান ও কর্মচারী ভাড়াসহ খরচের পর মুনাফা আসবে। সব কিছু হিসাব করে এবার বেশি দামে পোশাক বিক্রি করতে হচ্ছে। ভারত-চীন থেকে শাট ও টি-শার্ট আমদানি করে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ শপিং সেন্টারে বিক্রেতা শিমুল আহমেদ বলেন, গত বছর ভালো ব্যবসা হয়েছে। এবছরও শবেবরাতের পর থেকে বিক্রি হচ্ছে টুক-টাক। আশা করছি- আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়বে।

গত বছরের তুলনায় এবার দাম বাড়ছে কী না জানতে চাইলে শিমুল বলেন, প্রতি পিস শার্টের মূল্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গত বছর যে চায়না শার্ট বিক্রি করেছি ২৫০ টাকা এবার সেই শার্ট বিক্রি করছি ৩৫০ টাকায়। গত বছর ভারতীয় অরবিন্দ শার্ট বিক্রি করেছি ৮০০ টাকায়। এবার তা বিক্রি করছি ১২৫০ টাকা।

গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেটের এক লুঙ্গি বিক্রেতা বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষ্যে ১০০ থেকে ৪০০ টাকার লুঙ্গি আমি দোকানে এনেছি। কিন্তু বিকিকিনি কম, দামও বেশি। মাস শেষ তাই হয়তো বিক্রি কম। তবে এবার লুঙ্গি প্রতি দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

একই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম মানিক বলেন, করোনা ও সরকারি বিধিনিষেধের কারণে গত ৩ বছর আমাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। গত বছর কিছুটা মুনাফার দেখা পেয়েছিলাম। আশা করছি, এবার ভালো ব্যবসা হবে। এদিন সকাল-দুপর গড়িয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২২০০ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন একই মার্কেটের আরেক দোকানদার জসিম উদ্দিন। তিনি দেশি থ্রিপিসের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি পিস বিক্রি করেন। যার মূল্য ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে এ বিক্রেতা বলেন, মানুষ পোশাক কখন কেনেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর যদি সামর্থ্য থাকে তারপর কেনেন, তাই না? এমন কোনো জিনিস আছে যে দাম বাড়েনি। সবই বাড়ছে, তাহলে মানুষ কিনব কেমনে?

নিউমার্কেটের শাড়ির দোকানদার নূরুল ইসলাম জানান, যাকাতের শাড়ি থেকে শুরু করে, ঘরে পড়া, বিয়ে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিধান করা শাড়ি বিক্রি করছেন তিনি। শবেবরাতের পর থেকেই এগুলো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৪ ধরনের যাকাতের শাড়ি রয়েছে তার কাছে। গত বছর ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা যাকাতের শাড়ি এবার বিক্রি করছেন ৪০০ টাকায়। প্রতিটি শাড়িতে একশ থেকে দেড়শ টাকা দাম বাড়তি। ২০২০ ও ২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বেচা বিক্রি ভালো হয়েছে। আশা করছি এ বছর আরও ভালো হবে।

নিউমার্কেটে স্বামীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন মরিয়ম আক্তার নামের এক গৃহবধূ। তিনি বলেন, রোজার ১০ কিংবা ১৫ হয়ে গেলে পোশাকের দাম বেড়ে যায়। দোকানগুলোয় দম ফেলার জায়গা পাওয়া যায় না। তাই আগে আগে আসলাম। কিন্তু এখানে এসে অবাক। এক হাজার থ্রিপিস দাম করছে ৩০০০ হাজার টাকা। ঘুরে ফিরে মেয়েদের জন্য দুটি থ্রিপিস কিনলাম।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, প্রত্যেক ঈদেই ঘরে পড়া ও সাধারণ পার্টিতে ঘুরে বেড়ানো পোশাকই বেশি বিক্রি হয়। আমরা সেই চিন্তা করেই পোশাক উৎপাদন করেছি। ভারত, পাকিস্তান এবং কাশ্মীর থেকে আমদানি করেছি। তবে এবার এসব পোশাকের দাম বেড়েছে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার টাকায় যে থ্রিপিস বিক্রি করেছি। এবছর সেই থ্রিপিস বিক্রি করছি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। আমাদের কোন উপায় নেই, কারণ ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। উৎপাদন খরচও বেড়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ কারণে ঈদেও পোশাকের দাম বেড়েছে। এবার ঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারলে আশা করছি করোনা ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে গত ৩ বছর যে লোকসান হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনাকালীন ক্ষতি,ব্যবসায়ী,ঈদ পোশাক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close