নিজস্ব প্রতিবেদক :

  ১৮ মার্চ, ২০২৩

শিল্পকলায় সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসে রঙিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ছিল শুক্রবার (১৭ মার্চ)। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এসব সাংস্কৃতিক আয়োজনে রঙিন হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন।

জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে অব্যাহত রাখতে এবং বাংলাদেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলার চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। সেই থেকে দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের কাজ করে আসছে জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি। জাতির পিতার ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিল্পকলা একাডেমির দিনব্যাপী কর্মসূচি।

সকাল ১০টায় উদ্বোধন করা হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আর্ট ক্যাম্প। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ২ শতাধিক শিশুর অংশগ্রহণে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের প্লাজায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিশুকে একাডেমি থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পরে তাদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয় চিত্রশালা গ্যালারিতে। শিশুদের এই আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘২০৪১ এ দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। শিল্পে সাহিত্যে শিশুদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারলে তারাই একদিন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’

অবিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নম্বরের বিচারে শিশুর মেধাকে মুল্যায়ন না করে সৃজনশীলতার দৃষ্টিতে বিচার করলে প্রত্যেক শিশুই অসাধারণ হয়ে উঠবে।’ প্রতিদিন অন্তত একটা নিদিষ্ট সময় শিশুদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনতে মা-বাবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পরে অংশগ্রহণকারী শিশুদের হাতে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এ আয়োজন নিয়ে চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম বলেন, ‘শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর পাশাপাশি আমরা চাই, উন্নত বাংলাদেশের যে ভিশন সরকারের রয়েছে তা শিশুদের মধ্যে প্রস্ফুটিত করতে। ছোট শিশুদের মনে সঠিকটা তুলে ধরলে তারা সুন্দর চিন্তাধারা নিয়ে বেড়ে ওঠবে। ছবি আঁকানোর মাধ্যমে সেই বার্তাটাই সবার মধ্যে দিতে চাই।’

বিকাল ৩টায় ‘বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে ১০৩টি ছবি নিয়ে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। জাতীয় চিত্রশালার ২ নম্বর গ্যালারিতে ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে শিল্পী শাকিলা খান চয়নের এই চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।

বিকাল ৪টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে অভিভাবকসহ ২ শতাধিক শিশুর অংশগ্রহণে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে আলোচক শিশু বক্তারা নানা ধরনের বুলিং নিয়ে নিজেদের ভাবনা ও প্রতিবাদের কথা তুলে ধরে। শিশুরা জানায়, সমাজে এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কিংবা স্কুলের বন্ধুদের কাছেও নানা ধরনের বাজে মন্তব্য ও বর্ণ বৈষম্যের শিকার হয় তারা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ শীর্ষক এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন শিশু সভাপতি তাহফিম যুনাইরা আনশী।

বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের সামনে থেকে শিশুদের অংশগ্রহণে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। একাডেমির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও প্ল্যাকার্ড হাতে ব্যানার নিয়ে শতাধিক শিশু বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পরে আনন্দ শোভাযাত্রাটি একাডেমি প্রদক্ষিণ করে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।

সন্ধ্যা সাড় ৬টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পরে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নির্ভর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, বিকাল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তনে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আয়োজন করে ‘শিশুদের আবৃত্তিতে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের। এতে শিশুশিল্পীরা দলীয় ও একক পরিবেশনায় অংশ নেয়। আয়োজনের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গোলাম সরোয়ার, রেজীনা ওয়ালী লীনা, যুগ্ম সম্পাদক আজহারুল হক আজাদ।

দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কল্পরেখা, তক্ষশিলা, শিল্পবৃত্ত, ঋদ্ধস্বর, মৈত্রী শিশুদল, পিদিম থিয়েটার, নন্দন কুড়ি, আবৃত্তিপীঠ, বাংলা আমার, রংধনু, কিংবদন্তি আবৃত্তি পরিষদ, রঙ্গপীঠ, শব্দাঙ্গন, কথন মিরপুর।

একক আবৃত্তি পরিবেশন করে অতুল, প্রতুল, তুলতুল, নাজা রহমান, জোহানা নিধি, তুহি, রূপমঞ্জরী আর্যা, আরিবা আফ্রোদিতি জামান, লানিকা, অহন রায়, অদয়, অদ্বীশ। সঞ্চালনায় ছিলেন অমিয়া, অহনা ও সেমন্তি।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জন্মদিন,বঙ্গবন্ধু,সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাস,বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close