নিজস্ব প্রতিবেদক :

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নওগাঁয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সংসদে বিল পাস

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দিয়ে কোনো কারিকুলাম তৈরি হয়নি :  শিক্ষামন্ত্রী

ছবি : সংগৃহীত।

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দিয়ে কোনো কারিকুলাম তৈরি হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিল পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। এটিকে ইস্যু তৈরি করে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে।

এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে নওগাঁ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল-২০২৩’ পাস করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। গত ১০ জানুয়ারি সংসদে বিলটি উত্থাপন পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিকে পাঠনো হয়। পরে বিলটি পাসের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয় সংসদীয় কমিটি।

বিলের ওপর বিরোধী দলের সদস্যদের দেয়া বক্তব্যের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখানে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দিয়ে কোনো কারিকুলাম তৈরি হয়নি। কারিকুলাম নিয়ে যদি কেউ মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে সেই দায় সেই অপশক্তির। সেই দায় নিশ্চয়ই সরকার বা কারিকুলামের নয়।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গনে নিয়োগ বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সরকারের আমলে শিক্ষাঙ্গনের কি অবস্থা ছিলো, সেটা আমরা জানি। নিত্য দিন হত্যাকাণ্ড আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনার সময়ে শিক্ষাঙ্গন শান্ত। কোনো সেশন জট নেই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র‌্যাংকিংয়ের কথা তো চিন্তাই করা হতো না। গত কয়েক বছরে র‌্যাংকিংয়ের ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়ায় যেসব ফ্যাক্টের ওপর র‌্যাংকিং নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন সেসব বিষয়ে মনোযোগি হয়েছে। গত দুই বছরে আমাদের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্বদ্যালয়, এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও র‌্যাংকিংয়ে আগের তুলনায় ওপরের দিকে উঠে আসছে।

বঙ্গবন্ধুর কন্যাই বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনার সরকারের সময়ই হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে আরও বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই স্থাপিত হবে। আর্থিক বরাদ্দ কমের কথা বলেছেন, আমরাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তার মধ্যেও যতদূর সম্ভব আমরা দিচ্ছি, আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী হাতেই আজকে যেমন মেগা প্রকল্প হচ্ছে এগুলো জরুরি, এগুলো যখন হয়ে যাবে তারপরে শিক্ষা আমাদের একেবারে মেগা প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে, আরও অনেক বেশি বরাদ্দ পাবো।

শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, শ্রীলংকার চেয়ে আমাদের শিক্ষা অবস্থা খারাপ বলা হয়েছে, বহুদিন আগে আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সেই সময় তাদের শিক্ষিতের হার শতভাগ ছিলো। সেই আজকে ধ্বংসের দ্বার প্রাপ্তে। আর বাংলাদেশ এক সময় অন্যায়ভাবে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলা হয়েছিলো, সেই দেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়। তফাতটা এখানেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মান খারাপ, সেটা যেনো না মনে করি। সনদ যারা বিক্রি করছে, যেখানেই এ রকম তথ্য আসছে, সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এর আগে বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি দেখা দরকার। সেখানে শিক্ষার পরিবেশ নেই। টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও নিয়োগ বাণিজ্য চলছে। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলামে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া হয়েছে। এটাকে পুঁজি করে সম্প্রদায়িক শক্তি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নেই। মান নিচে নেমে গেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দেশের ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। তাই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পটোয়ারি বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কম। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ পরিবারের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাবে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কোথায়? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানোর থেকে মানসম্মত শিক্ষা জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষতঃ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বেতনভোগী শিক্ষক ও কর্মচারী সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের কোনো পদে প্রার্থী হতে চাইলে ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দেবেন।

আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ-১৯৭৩ এর বিধানাবলি পরিপালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য। আচার্য্য নির্ধারিত শর্তে স্বনামধন্য একজন শিক্ষাবিদকে চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ করবেন। কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে বা অন্য কোনোভাবে উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। আচার্য্য যেকোনো সময় উপাচার্যের নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিক্ষামন্ত্রী,সাম্প্রদায়িক শক্তি,উস্কানি,কারিকুলাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close