নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

রাজধানীতে তীব্র যানজট

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকায় প্রতিদিনই যানজট থাকে। কিন্তু আজ অসহনীয়। বাসে না উঠে হেঁটে গেলে অনেক আগেই গন্তব্যে যাওয়া যেত। মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন মিরপুরের যাত্রী হাবিব বেপারী।

হাবিব বলেন, কাকলী থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় কাকরাইলের বাসে উঠেছি। এখন বেলা সাড়ে ১১টা। মাত্র মগবাজার পৌঁছালাম। বাকি পথ যেতে কত সময় লাগবে, জানি না। যানজটের কারণে গাড়ি আগাতেই পারে না। এভাবে দিনের বড় একটা অংশ যানজটে রাস্তায় কেটে যায়। কোনো কাজই সময় মতো করতে পারি না।

বেলা ১১টায় মহাখালী থেকে গুলিস্তানগামী স্কাইলাইন পরিবহনে ওঠেন হাকিম। ব্যবসার কাজে যাবেন পুরানা পল্টন। তিনিও বাসে ওঠার পর ৪৫ মিনিটে মগবাজার পৌঁছান। যানজটে গাড়ি আটকে থাকা অবস্থায় হাকিম বলেন, যানজট এখন নাগরিকদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে আজকের যানজট সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ফুটপাতে হাঁটা গেলে অনেক আগেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতাম। এই শহর দিন দিন নরকে পরিণত হচ্ছে।

এ সময় স্কাইলাইন পরিবহনের চালক রহিম মিয়া বলেন, ১০ বছর ধরে এই লাইনে গাড়ি চালাই। ১০ বছর আগে গাজীপুর থেকে গুলিস্তানে পাঁচ-ছয়বার আসা-যাওয়া করতে পারতাম। এখন দিনে দুই-তিনবার আসা-যাওয়াই সম্ভব হয় না। যানজটে রাস্তায় বসে গাড়ির তেল পোড়াতে হয়। গাড়িতে বসে থাকতেও অসহ্য লাগে।

তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন পুলিশের সদস্য মোস্তাফিজ। তিনি বলেন, সাধারণত এই সড়কে সকালে অফিস সময়ে গাড়ির চাপ থাকে। আবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এর মাঝে দিয়ে যানবাহন অনেকটাই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপও বাড়ছে। আমরা যানজট নিরসনে কাজ করছি।

সড়কে যানজট পরিস্থিতি দেখা যায় মুঠোফোনে ‘ট্রাফিক নিয়ার মি অন ম্যাপ’ অ্যাপে। এই অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যায়, কাকরাইল, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, খিলগাঁও, মালিবাগ আবুল হোটেল এলাকাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট ছিল। তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, কলাবাগান, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট এলাকায়। এসব এলাকায় মার্কেটগুলোতে আজ মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে রাস্তায় যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম।

এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে পিক আওয়ারে দুটি রাস্তা একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে যদি কারো যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে অনেকটা রাস্তা তাকে ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করা হয় না। যা এখন থেকে আমাদের করতে হবে এবং এটা সময়ের দাবি। আমাদের ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সড়ক হচ্ছে ডাবল রোড। এছাড়া বহির্বিশ্বে অনেক যায়গায় ডাবল রোড আছে। সেসব দেশে ডাবল রোডে দেখা যায় অফিস টাইম বা পিক আওয়ারে দুটো রাস্তাকে এক সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়। যখন অফ পিক তখন দুটো রাস্তাকে আলাদা করে দেওয়া হয়। আমাদের এ পর্যন্ত এমন কোনো বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করা হয়নি, এমনকি আবিষ্কারও করা হয়নি।

যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের গবেষণা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যানজট নিয়ন্ত্রণে মূলত দুটি সংস্থা কাজ করে। ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন ঢাকা যানবাহন সমন্বয়ন কর্তৃপক্ষ। তাদের মূলত গবেষণা করার কথা। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির কোনো গবেষণা সেল নেই। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কোনো পর্যবেক্ষণও নেই। মোট কোথায় এগুলো চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে। আসলে সরকারের এই বিষয়ে গবেষণা করা দরকার যে, পিক আওয়ার এবং অফ পিক আওয়ারে কোন রাস্তায় কী পরিমাণ ট্রাফিক হয় তার ওপর গবেষণা করে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার। এটা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজধানী,তীব্র যানজট,মোজাম্মেল হক চৌধুরী,যাত্রীকল্যাণ সমিতি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close