reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

‘নন্দিতার মরণোত্তর দেহদান মানব জাতি মনে রাখবে’

সদ্যপ্রয়াত ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা নন্দিতা বড়ুয়ার (৬৯) মরণোত্তর দেহদানের কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরেছে কাওখালি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস (২৩) ও পটুয়াখালীর দলিল লেখক আবদুল আজিজের (৫০)।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনাটমি বিভাগের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নন্দিয়া বড়ুয়ার মরণোত্তর দেহগ্রহণকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দেহগ্রহণকালে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহ আলম, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার (টিটো), ভিসির একান্ত সচিব-১ সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস, এনাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি, নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়া. নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়া গ্রহীতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও আবদুল আজিজ প্রমুখসহ এনাটমি বিভাগের শিক্ষক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়াও মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা পোষণ করেন।

এ সময় উপাচার্য বলেন, নন্দিতা বড়ুয়ার এ ধরনের মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করি। মরণোত্তর দেহদানকারীর দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়াসহ পরিবারের সবাইকে এই ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা হিসেবে সারা ইসলাম বাংলাদেশের মানবকল্যাণে দেহদানে ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবেন। সারার পথ অনুসরণ করে আজ অনেকেই ক্যাডাভেরিক অঙ্গদান ও মরণোত্তর দেহদানের আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। আজ নন্দিতা বড়ুয়ার অবদান মানব জাতি মনে রাখবে। নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়ায় নতুন করে চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন আরো দুজন। গত এক মাসে মরণোত্তর চক্ষু দান প্রক্রিয়ায় ১২ জনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছি। কর্নিয়া গ্রহীতারা বেশ ভাল আছেন। তিনি দেশের সব মানুষের প্রতি এ রকম মহতী কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকে বেগবান করা হয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার কাজে দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করার একটি প্রয়াস হলো এই মরণোত্তর দেহদান।

অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার মরদেহটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগে সংরক্ষণ এবং শিক্ষণ প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের আবেদনপত্রটি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নিকট প্রদান করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের অনুমতিতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এনাটমি বিভাগের প্লাস্টিনেশন ল্যাব অ্যান্ড মিউজিয়াম কমপ্লেক্সে সম্পন্ন করা হয়। মরদেহের এমবামিং প্রক্রিয়ার প্রারম্ভে অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় এবং এনাটমি বিভাগের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণে মরদেহের যথোচিত সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।

গত ৩০ জানুয়ারি রাত ২টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নন্দিতা বড়ুয়া ৬৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশাতেই মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারে সন্তানদের কাছে নিজের ইচ্ছেপোষণ করে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যু পর পরিবারের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্নিয়া বিশেষজ্ঞরা প্রয়াতার কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। গত ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান পটুয়াখালীর দশমিনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আবদুল আজিজের চোখে ও অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস ঝালকাটি জেলার কাওখালি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসির চোখে একটি করে কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মরণোত্তর দেহদান,নন্দিতা বড়ুয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close