মিজান রহমান

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যচিত্র সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু

সময়ের স্রোতে একে একে হারিয়ে যাচ্ছেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। খবরের কাগজে প্রায়ই আসছে তাদের মৃত্যুর খবর। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে যুদ্ধের বীরত্বগাথা। সেই বীরত্বগাথা সরকারিভাবে সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৮০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারভিত্তিক তথ্যচিত্র সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ১৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় স্বাধীনতাযুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির ১৬টি ডকুমেন্টারি নির্মাণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণেও ‘ই-আর্কাইভ’ স্থাপন করা হবে।

এ লক্ষ্যে গত ৫ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিগগির প্রকল্পের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বকণ্ঠে বীরত্বগাথা সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা অনলাইন প্ল্যাটফরম ইউটিউবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চায় মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বীর বাঙালি যে যেভাবে পেরেছেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ দশকে প্রায় ৫০ ভাগ গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত হয়েছেন। এজন্য প্রকল্পটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তাদেরই কণ্ঠে ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে সংরক্ষণের ঘোষণা দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রণীত না হওয়ায় প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ বাস্তবায়নের কাজ গত কয়েক বছর থমকে ছিল।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ধারণা করছি, দেশে সোয়া লাখ মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। তাদের ‘ভিডিও ইন্টারভিউ’ আগামী প্রজন্মের জন্য সংগ্রহ, সম্প্রচার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ মন্ত্রণালয় অনেক আগেই নিয়েছিল। কিছু সমস্যার কারণে এগোয়নি। তবে এখন আমরা ৮০ হাজার জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধস্মৃতি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগির ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

তিনি আরো বলেন, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার মৌখিক ভাষ্য আমরা ১০ থেকে ২০ মিনিটে শুনতে চাই, সেটা আর্কাইভে রাখব। প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বর্ণনা রেকর্ড এবং সেগুলো সারাজীবন সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে নিজের বীরত্বগাথা তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা গেলে সেটি হবে অত্যন্ত ইতিবাচক। এতে তরুণরা সেই বীরত্বগাথার পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজকারদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথাও জানতে পারবে। ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। খুব দ্রুত ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৩ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ৬ হাজার ৩৯৯ জন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ জন।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তথ্যচিত্র সংরক্ষণ,বীর মুক্তিযোদ্ধা,বীরত্বগাথা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close