নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

লক্ষ্য চাপ কমানো, বিদ্যুতের দাম বাড়বে ধাপে ধাপে 

ছবি : সংগৃহীত

একবারেই দাম না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা করছে সরকার। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন একবারেই গ্রাহকপর্যায়ে দাম ১৫ ভাগ বাড়ানোর চিন্তা করছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী আদেশে মূল্যবৃদ্ধির আগে মানুষের ওপর এর কতটা চাপ পড়বে সেই বিবেচনা করার কথা বলা হয়।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুতের দাম একবারে ১৫ থেকে ২০ ভাগ বাড়লে বাজারে পণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। এজন্য সরকারের যদি কিছুটা লোকসানও হয় তাহলেও ধাপে ধাপে দাম বাড়ালে মানুষের ওপর পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুব একটা পড়ে না।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকার সম্প্রতি বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে গ্যাস বিক্রি থেকে অতিরিক্ত যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি কেনা হবে। এই এলএনজি দিয়ে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাহলে গড়ে এলএনজিচালিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে সাড়ে আট টাকা। কিন্তু দেশের তেলচালিত (ফার্নেস) অয়েলে উৎপাদন খরচ ২৯ টাকার কাছাকাছি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০ টাকার মতো কম প্রয়োজন হবে। যাতে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকি কম প্রয়োজন হবে। যাতে বিদ্যুৎ জ্বালানিতে সামগ্রিক ভর্তুকির হার কমবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, আগামী দুই মাসে আবার পাঁচ ভাগ হারে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে। গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরে বিষয়টি সমন্বয় করে দেখা হবে। যদি মনে করা হয় পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন, তাহলেই তা বাড়ানো হবে। যদিও পিডিবি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে উল্লেখ করে। এরই মধ্যেই ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা করে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা (পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, পিডিবি হয়তো শুধু নিজেদের কথা চিন্তা করছে। কিন্তু সরকার সামগ্রিক ভর্তুকির কথা চিন্তা করছে।

গত বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পিডিবিকে ২৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। চলতি বছর এর পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা পিডিবির জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এত বেশি পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় সরকার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা প্রতি মাসে অল্প অল্প করে বিদ্যুতের দাম বাড়াব। এতে মানুষের ওপর চাপ কম পড়বে। সরকার ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ ভাগ দাম বাড়ায়। এর আগে ১৯ ভাগ পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি।

এদিকে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ইনপুট খরচ বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আর্থিক ক্ষতি ৫৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসান ছিল ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।

পিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর গ্যাস বিল পরিশোধ করতে আমাদের ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে।

সরকার গত ১৮ জানুয়ারি সরকারি, বেসরকারি ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীদের জন্য খুচরা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। নতুন এই দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে বাসাবাড়ি, সিএনজিচালিত মোটরযান ও চা-বাগানের ব্যবহারের জন্য এই দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

গেজেট অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগের ৫ টাকা ২ পয়সার পরিবর্তে প্রতি ঘনমিটার ১৪ টাকা দরে গ্যাস কিনবে। অর্থাৎ, দাম বৃদ্ধি হয়েছে ১৭৯ শতাংশ।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির পর এক অর্থবছরে তাদের লোকসান ২৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে যাবে, যা প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি।

পিডিবির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের লোকসান ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করার কথা ছিল। কিন্তু পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর লোকসান প্রায় ৪ হাজার টাকা কমে ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। এখন ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন লোকসান ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিদ্যুৎ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close