নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে 

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রভাব কমে আসার পর এবার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ উপলক্ষে চলছে ব্যস্ত সময়। এরই মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে একাডেমি সূত্র জানায়। এদিকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গতকাল বিকেলে মেলার প্রস্তুতি কাজ সরেজমিনে দেখার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে বইমেলার জন্য প্রত্যেক সেক্টর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবারও একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নানা বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির মূল কাজ বইমেলা কার্যক্রম পরিচালনা করা নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান । বাংলা একাডেমি তো বাইরের প্রকাশনার দায়িত্ব নিতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা বইমেলায় আসছে, সবকিছু মনিটর করা একাডেমির পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। সরকারি কোনো সেল থাকলে এবং সরকারিভাবে যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাহলে ভালো হয়। তিনি বলেন, মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে গত ১৯ জানুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, বইমেলার প্রথম দিন থেকেই টাস্কফোর্স যেন সঠিকভাবে বিষয়গুলো মনিটরিং করে। বাংলাদেশ শিল্পীকল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসীম কুমার দেকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কপিরাইট আইন ও বইমেলা নীতিমালার প্রতিপালন পর্যবেক্ষণ এবং কপিরাইট আইন ও বইমেলা নীতিমালা লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এবার বইমেলায় কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে সদস্যসচিব বলেন, মেলার পুরো বিন্যাসই পরিবর্তন করা হয়েছে। মেলায় মূল মঞ্চ থাকবে বাংলা একাডেমি অংশে। আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে। বেশি স্টল ও প্যাভেলিয়ন থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অন্যদিকে মেট্রোরেলের কারণে বিগত সময়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন যে ১৮২টি স্টল ও ১১টি প্যাভেলিয়ন ছিল তা এবার সরিয়ে এনে সোহরাওয়ার্দীর মূল কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। আর সেই স্থানে ফুডকোর্টসহ নানা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আগে যেখানে মেলার প্রধান প্রবেশপথ ছিল তা পরিবর্তন করা হয়েছে। আগেকার সেই প্রবেশ ফটক এবার প্রস্থানের জন্য রাখা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে বাংলা অ্যাকাডেমির উল্টোদিকে। মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে আগতরা মেলায় প্রবেশ করবে। এবার মেলায় আগতদের জন্য নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে ডিজিটাল বোর্ডসহ প্ল্যাকার্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে ম্যাপ থাকবে এবং বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। এরই মধ্যে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-সংক্রান্ত নীতিমালা একাডেমির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকছে। এরই মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান, শিশু চত্বর ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন আছে ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সব মিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং ৭০৪টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে। এ ছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তাবূহ্য।

মূল গেট থেকে ঢুকেই শিশু চত্বর পাওয়া যাবে। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন থাকবে। মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। ৯টায় আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য গোলাম কুদ্দুস জানান, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। এটি বাঙালির জাতিসত্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং প্রতি বছরই বাংলা একাডেমির বইমেলা দর্শক, পাঠক এবং প্রকাশকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে বাংলা একাডেমির চত্বরের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত কয়েক বছর আগে সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা সংকট কাটিয়ে মানুষ আবার বইমেলামুখী হয়েছে। সেভাবেই এবারের বইমেলার আয়োজন চলছে। বিশ্বাস করি, নতুন পাঠক-ক্রেতা এবং প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে এবং বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলেও আশা করি। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি ও প্রকাশনা সংস্থা পুঁথি নিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল জানান, এবারের বইমেলায় গতকাল লটারির মাধ্যমে প্যাভেলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকাশকদের জন্য বইমেলা আয়ের উৎস। আশা রাখছি এবারের বইমেলা জমবে। তবে, কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে এবারের বইয়ের দাম কিছুটা বেড়ে যাবে।

উল্লেখ্য, সংক্রমণের বিধিনিষেধের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২১ সালে মেলা শুরু হয় মার্চে। আর পরের বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়। ২০২০ সালে এক দিন পিছিয়ে মেলা শুরু হয়েছিল। প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় তা এক দিন পিছিয়ে শুরু হয়েছিল।

এবারের বইমেলার শেষে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের মধ্য থেকে দেওয়া হবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’। এ ছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেওয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে। এর বাইরে ২০২৩ সালে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বইমেলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close