reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

ঐশ্বর্য ছড়িয়ে প্রস্থান

সারাহ ইসলাম

মৃত্যুর কাছে সারাহ ইসলামের সমর্পণ অত্যন্ত গৌরবময়। মৃত্যুকে তিনি করে গেছেন ঐশ্বর্যমণ্ডিত। সারাহ ইসলামের বয়স ২০ বছর। এই অল্প বয়সেই থেমে গেছে তার জীবনযাত্রা। এই মেয়েটি আর নেই, চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি রোগগ্রস্ত ছিলেন। ক্ষণজন্মা এই মেয়েটি পরিচয় দিয়ে গেছেন দায়িত্বের দেখিয়ে গেছেন এবং করে গেছেন।

সারাহ ইসলাম মৃত্যুর সময় তার দুটি কিডনি দান করে গেছেন। দুটি কর্নিয়াও দিয়ে গেছেন। তার দুটি কিডনি দুজনের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। দুজনই নারী। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসা জগতে নতুন সূর্যের উন্মেষ ঘটেছে। এই প্রথম দেশে মৃত ঘোষিত (ক্লিনিক্যালি ডেথ) ব্যক্তির দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হলো অন্য ব্যক্তির দেহে। এর আগে আমাদের দেশে কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু হয়ে ওঠেনি। এবার সেটি সম্ভব হলো।

সারাহ তার অঙ্গ দান করে গেছেন। মূলত তিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে গেলেন। তিনি দেখিয়ে গেলেন, মৃত্যুও কীভাবে দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠতে পারে। সারাহ ইসলামের দান করে যাওয়া দুটি কর্নিয়া দুজন ব্যক্তির চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছে। আর মানুষকে কিডনি দানে উৎসাহিত করতে তিনি পথ দেখিয়ে গেলেন। জীবিত মানুষের কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ও ভয়াবহ ব্যবসাও নিশ্চয়ই বন্ধ হবে এক দিন। এর মাধ্যমে মানুষের অঙ্গহানি ও প্রতারিত হওয়াও থামবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিডনি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকরা এ কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। সেসব চিকিৎসককে প্রাণঢালা অভিবাদন। তারাও হলেন দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে ইতিহাসের অংশ।

দেশে প্রথম এ ধরনের অস্ত্রোপচার উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের সঙ্গে সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সারাহ সত্যি সত্যি স্বর্গীয় সন্তান ছিল। ও বলেছিল, ‘আমার সবকিছু গবেষণার জন্য দিয়ে দিতে পার মা।’ সারাহর ইচ্ছা ছিল, ওর ব্রেন নিয়ে গবেষণা হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নাম চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার এ ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে। অনেক মানুষ নতুন জীবন পাবে।

অল্প বয়সে দুরারোগ্য টিউবেরাস স্কেরোসিস রোগে আক্রান্ত হন সারাহ। হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে ক্লিনিক্যালি ডেড ছিলেন। তিনি চলে গেলেন তবে চারজনকে ফিরিয়ে দিলেন জীবনের আশা। দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে জ্বালিয়ে গেলেন আশার প্রদীপ। সারাহ যখন মৃত্যুশয্যায় তখন তাকে নিয়ে মা শবনম সুলতানা ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, সেই অকুতোভয় মেয়েটি যে কিনা বরাবরই রক্ত শূন্যতায় ভোগে... সে কিনা কারো জরুরি রক্তদানের প্রয়োজনে ছুটে চলে যেত রক্তের সন্ধানে।

এই মেয়েটিই তার মৃত্যুর সময় দান করে গেছেন দুটি কিডনি ও কর্নিয়া। তার কাছ থেকে অঙ্গ উপহার পেয়ে নতুন জীবনের খোঁজ পেয়েছেন চারজন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সারাহ ইসলাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close