নিজস্ব প্রতিবেদক
হাত বদলে পেঁপের দাম বাড়ে ৩ গুণেরও বেশি
কৃষক বিক্রি করেন ৭ টাকায়, ঢাকায় ২৫ টাকা
উৎপাদন পর্যায়ে একজন কৃষক প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি করেন ৭ টাকা করে। তবে রাজধানীর বাজারে পৌঁছালে সেটার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ টাকা কেজি। মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব পার হয়ে ৩ বার হাত বদলের ফলে দাম বেড়ে যায় ৩ গুণেরও বেশি।
সিংগাইরের রাজ দক্ষিণ গ্রামের পেঁপে চাষী ইয়াসিন হোসেন চর নয়াডাঙ্গী বাজারে ২৩ হাজার ১০০ টাকায় ৩ হাজার ৩০০ কেজি কাঁচা পেঁপে বিক্রি করেন। তিনি জানান, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদ দিলে প্রতি কেজি পেঁপের জন্য তার সাড়ে ৬ টাকা করে লাভ থাকে।
তিনি ৩ বছর ধরে সাড়ে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁপে চাষ করছেন। প্রতি বিঘা পেঁপে চাষ করতে (জমি লিজের ১৫ হাজার টাকা সহ) তার খরচ হয় ৫৫ হাজার টাকা। এ বছর প্রতি কেজি পেঁপে ৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করেছেন।
ইয়াসিন বলেন, ৩ মাস আগেও আমি পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি পেঁপে ১০ টাকায় বিক্রি করতাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পর দাম কমে দাঁড়ায় ৫ টাকায়, এখন সেটা বেড়ে ৭ টাকায় পৌঁছেছে। সিত্রাংয়ের কারণে তার অধিকাংশ পেঁপেগাছ উপড়ে গেছে। তবে আগামী বছর প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভের আশা করছি।
একই গ্রামের শাহজাহান মোল্লা ১০ বছর ধরে কাঁচা পেঁপের ব্যবসা করছেন। তিনিও চর নয়াডাঙ্গী থেকে কাঁচা পেঁপে কিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন। তিনি চর নয়াডাঙ্গী বাজার থেকে ৭ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ২৯৫ কেজি কাঁচা পেঁপে কেনেন ৬৫ হাজার ৬৫ টাকায়।
শাহজাহান জানান, কারওয়ান বাজারের স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি পেঁপে ৮ টাকা ২৫ পয়সায় বিক্রি করেছেন তিনি। তবে তার আগে পরিবহন, ওজন করা, পাটের বস্তায় ভরা, শ্রমিক খরচ, ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ, কারওয়ান বাজারে গাড়ি পার্কিং এবং খাবার খরচ বাবদ প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিল। পেঁপেগুলো বিক্রি করে আমার আড়াই হাজার টাকা লাভ হয়।
শাহজাহানের কাছ থেকে পেঁপে কেনেন কারওয়ান বাজারের জলিল মিয়া। ২৫ বছর ধরে তিনি ফলের ব্যবসা করছেন। ফজল মূলত যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাভার ও সিঙ্গাইর এলাকা থেকে এসব সবজি কেনেন।
প্রতিকেজি পেঁপেতে পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ ৫০ পয়সা ব্যয় ধরে সিঙ্গাইর, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ২০০ বস্তা পেঁপে কিনেছিলেন জলিল। এর পর ৩০ অক্টোবর প্রতি কেজিতে তিনি ২৫ পয়সা লাভ রেখে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সাড়ে ৮ টাকায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমি ৫-৭ বছরে এত বেশি কাঁচা পেঁপে উৎপাদন হতে দেখিনি।
এদিকে রাজধানীর মালিবাগ বাজারে দেখা যায় এক কেজি কাঁচা পেঁপে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা রহিম শেখ জানান, তিনি সাড়ে ৮ টাকা দরে ৫০ কেজি কাঁচা পেঁপে কিনেছেন। পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজিতে তার ব্যয় হয় সাড়ে ১২ টাকা করে। আমি প্রতি কেজি পেঁপে ২৫ টাকায় বিক্রি করছি। কিছু বিক্রি হবে ২০ টাকায়, আবার কিছু অবিক্রিত থেকে যাবে। গড়ে কেজিতে ১০ টাকা করে লাভ করতে পারব।
কেন এত বেশি লাভ করছেন জানতে চাইলে রহিম শেখ বলেন, মাসিক বিদ্যুৎ বিল ও অন্য খরচের পাশাপাশি তাকে দৈনিক ৩০০ টাকা ফুটপাত ট্যাক্স' দিতে হয়। ১৫০ কেজি সবজি বিক্রি করে আমার ১ হাজার টাকা লাভ থাকে। ৫০ কেজি পেঁপে বিক্রি করে আমার মাত্র ৫০০ টাকা লাভ থাকবে।
এ বিষয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে দেশে এমন অবস্থা চলছে। ভোক্তারাও এ নিয়ে প্রতিবাদ না করায় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভের সুযোগ পাচ্ছে। ক্যাব এ ধরনের সমস্যার বিষয়ে সোচ্চার, কিন্তু ভোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ এবং সচেতনতা ছাড়া ফলপ্রসূ কিছুই অর্জন করা যায় না।