নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

শীতের সবজির বাজার চড়া, কমছে মুরগি ও ডিমের দাম

নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি, বেড়েছে আটা 

শীত জেঁকে বসার আগে অগ্রহায়ণ মাসে পাওয়া যায় আগাম মৌসুমি সবজি। অধিক লাভের আশায় কৃষকেরা শীতকালীন এসব সবজি চাষ করে থাকেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো। এতে মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসতে শুরু করেছে হরেক রকম শীতের সবজি। সরবরাহ ভালো থাকলেও সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। তবে বাজারে কমতে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। খুচরায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। আর মুরগির ডিমের ডজন পড়ছে ১২৫-১৩০ টাকা। নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় দামও কমছে। রসুনও কমতির দিকে। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিকে, নানা অজুহাতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে চিনির দাম। গ্যাস সংকটে চিনি পরিশোধনে খরচ বাড়ছে, এমন অজুহাতে চিনির দাম বেড়েছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, শিগগির এ সংকট কেটে যাবে। তবে তা হয়নি। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে পরে দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০২ ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এরপরও বাজারে সব ধরনের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে আটার দাম। তবে কিছুটা দাম কমেছে পেঁয়াজের।

মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব দোকানেই নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। সেখানে মারজানা স্টোর নামে এক মুদি দোকানের দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার দাম ঠিক করে দিয়েছে, কিন্তু কোম্পানি আমাদের বেশি দামেই চিনি দিচ্ছে। আমাদের কেনাই পড়ছে ১১০ টাকার উপরে। আমরা নির্ধারিত দামে বিক্রি করবো কীভাবে?

অন্যদিকে প্যাকেট আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা আর খোলা আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০-১১০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫-১০ টাকা কমে ৪০-৫০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৫ টাকা কমে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলাজাত তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা।

বাজার করতে আসা স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। মুদি পণ্যগুলোর দাম যে যেভাবে পারছে বাড়াচ্ছে। একবার যেটা বাড়ছে সেটা আর কমছে না। ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। মানুষ কম কিনছে। ১০ টাকার জিনিস দরকার, ৫ টাকার কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাশির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, সোনালি মুরগী ২৫০ টাকা ও দেশি মুরগী ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ টাকা আর হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মনসুর আলম জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম পড়তির দিকে।

বাজারে শিম কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা, মানভেদে বেগুন ৫০-৮০ টাকা, ওলকপি ৫০-৬০ টাকা, দেশি গাজর ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০-১০০ টাকা, লাল টমেটো ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে বাজারে একটি ফুলকপি ৪০-৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাঁধাকপি ও ফুলকপির আকার ছোট হলে কমেও পাওয়া যাচ্ছে। লাউয়ের ক্ষেত্রেও তা-ই। আকার ও মানভেদে প্রতিটি লাউয়ের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা। কেজি প্রতি কাঁচা মরিচের দাম ৬০-৮০ টাকা। আর পাতাসহ নতুন পেঁয়াজের প্রতিটি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকায়।

আবহাওয়া ভালো থাকায় সবজির ফলন ভালো হয়েছে। এ জন্য সরবরাহ ভালো। তবে নতুন সবজি বাজারে এলে খুচরা ব্যবসায়ীরা একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে চান।

টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, বাজারে নতুন সবজি এলে দাম একটু বাড়তি থাকে। তবে এবার শীতের সবজির সরবরাহ ভালো। দাম বেশি দিন বাড়তি থাকবে না।’

বাজারে করলা ৬০-৭০ টাকা, পটোল ৫০-৬০ টাকা এবং ঢ্যাঁড়স ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা কেজি। এদিকে বাজারে শীতের সবজির মধ্যে তুলনামূলক কম দামে মিলছে মুলা। মানভেদে প্রতি কেজি মুলার দাম ৩০-৪০ টাকা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।

বাজারে শীতের পালংশাক, মুলাশাক, লালশাক প্রতিটি বড় আঁটির দাম রাখা হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। পুঁইশাক, ডাঁটাশাক ও লাউশাক মিলছে প্রতি আঁটি ৩০ টাকার মধ্যে। বাজারে ক্যাপসিকাম, ব্রকলি ও রেড ক্যাভেজের মতো সবজিও এসেছে। তবে এসব সবজি সাধারণের নাগালের বাইরে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় সবজির ফলন ভালো হয়েছে। এ জন্য সরবরাহ ভালো। তবে নতুন সবজি বাজারে এলে খুচরা ব্যবসায়ীরা একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে চান।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শীতের সবজি,বাজার চওড়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close