এইচ আর তুহিন, যশোর

  ২৪ নভেম্বর, ২০২২

সুযোগ দিলে আগামী দিনেও উন্নয়ন করব : প্রধানমন্ত্রী

যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আগামী দিনে আরো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিগত দিনে দেশের উন্নয়ন করেছি, আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনেও উন্নয়ন করব। কাজেই ওয়াদা দেন, আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভ মানুষের কাজে লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশি দামে গম আনতে হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে। খালেদা জিয়ার আমলে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। এখন ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে। ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংকে টাকা নেই কথাটা মিথ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ মিটিং করেছি। ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে। দেশে আমদানি, রপ্তানি আয়, ট্যাক্স কালেকশন বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যাতে সম্মান নিয়ে চলতে পারে সে ব্যবস্থা করছি। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছি। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই উন্নয়ন করছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সবার হাতে হাতে আজ মোবাইল ফোন আওয়ামী লীগ দিয়েছে। আর মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শুধু রক্ত আর হত্যা ছাড়া কিছু দিতে পারেনি। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কোনো কিছু রেখে যায়নি।

তিনি বলেন, জিয়া, মোশতাক এরা সবাই খুনি। ১৫ আগস্টের পর কি হয়েছে জয় বাংলা স্লোগান, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ ছিল। হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্র হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকতে তারেক রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বলে শাস্তি পেয়েছে। অস্ত্র চোরাকরবারি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। আমাকেসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া শুধু জনগণের অর্থ নয় এতিমের অর্থ মেরে দিয়েছে। যে দলের নেতারা দুর্নীতিবাজ সে দল জনগণকে কি দিবে বলেন? তারা শুধু রক্ত চুষে খেতে পারে এটাই বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করছি। একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। কারো জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন উৎপাদন করেন এই আহ্বান থাকবে।

যশোরে জনসভা করতে পেরে তিনি আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানের মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, এর কারণে এখানে আসা যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে আইটি পার্ক করা হবে।’

যশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ ভবদহের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অঞ্চলের কিছু স্থান এখনও জলাবদ্ধ রয়েছে। আমরা কপোতাক্ষ খননের মাধ্যমে প্রায় ৮২ কিলোমিটার নাব্যতার জন্যে প্রকল্প নিয়েছি, যাতে এই নদে নৌকা চলাচল করতে পারে। ভবদহ অঞ্চলের নদীগুলো ড্রেজিং করার লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এতে এই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি থাকবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যশোরের যে স্টেডিয়ামে (শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম) বঙ্গবন্ধু আশা-আকাঙ্খার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে স্টেডিয়াম এখন জরাজীর্ণ। এই স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য এরই মধ্যে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটিকে ১১ স্তরবিশিষ্ট আধুনিক স্টেডিয়াম করা হবে।’

যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের খেলাধুলা করতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে, সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা শান্তি চাই, দেশের উন্নতি চাই। সবাই মিলে কাজ করলে অবশ্যই দেশের উন্নয়ন করতে পারব।’

এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে যশোর জেলার আট উপজেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা জনসভায় আসেন। দুপুরের আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকাল থেকেই জনসভাস্থল অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাদা গেঞ্জি ও লাল-সবুজ টুপি পরে পুরুষ কর্মী-সমর্থকরা এবং লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি পরে নারী কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে আসেন। সকাল থেকে যশোর শহরের বিভিন্ন সড়কে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

যশোর স্টেডিয়ামে নৌকার আদলে দৃষ্টিনন্দন সভামঞ্চ নির্মাণ করা হয়। রং-বেরঙের পোশাকে সমাবেশস্থলে নতুনমাত্রা যোগ হয়। নেতাকর্মীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি সংবলিত গেঞ্জি পরে কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় হাজির হন। নেতাকর্মীরা হাতে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ডও বহন করেন।

পাঁচ বছর পর শেখ হাসিনা যশোরে জনসভায় ভাষণ দেন। সভাস্থলে প্রবেশের জন্যে ১০টি প্রবেশদ্বার খোলা হয়েছে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা ছিল কঠোর অবস্থানে। ছিল র‌্যাবের প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াডও।

সমাবেশকে সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর করে তুলতে দলীয় ৪০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক সমাবেশের প্রবেশমুখ, সমাবেশ স্থল ও সমাবেশে আসাদের সহযোগিতা করেন। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দাবি লোকসমাগম ৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এতে যশোর জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অ্যাকাডেমি যশোরে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২’ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

দেশপ্রেম, আন্তরিকতা, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরে দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা মাথায় রেখে বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে যশোর আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায় যশোর বিমান বাহিনী অ্যাকাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন তিনি। এ সময় বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানান বিমান বাহিনীর চৌকস সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি সেরা ক্যাডেটদের হাতে ‘সোর্ড অব অনার’, ‘চিফ অব এয়ার স্টাফ ট্রফি’ এবং ‘কমাড্যান্টস ট্রফি’ তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত ক্যাডেটদের ফ্লাইং ব্যাজ পরিয়ে দেন এবং বিভিন্ন সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননায় ভূষিত করেন। ৮১ নম্বর বাফা কোর্সে সার্বিক প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ চৌকস সাফল্যের জন্য স্কোয়াড্রন সিনিয়র অফিসার খন্দকার ইমামুর রহমান সোর্ড অব অনার লাভ করেন। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ ফ্লাইফাস্ট এবং এরোবেটিকস প্রদর্শন করেন বিমান সেনারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধানমন্ত্রী,সুযোগ,উন্নয়ন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close