নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল : দ্রুত এগোচ্ছে কাজ, বাড়তে পারে ব্যয় 

ফাইল ছবি

ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম ধাপের নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এটি আগামী বছরের অক্টোবরে সীমিত আকারে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তারপর পরীক্ষামূলক কাজ শেষে মূল যাত্রীসেবা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হতে পারে। এ অবস্থায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কিছু কাজ প্রথম ধাপেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে টার্মিনাল নির্মাণের ব্যয়ও বাড়বে।

জানা গেছে, টার্মিনালে নতুন কিছু অবকাঠামো প্রথমেই যুক্ত হচ্ছে, যা মূলত প্রকল্পের প্রথম ধাপে করার কথা ছিল না। এর মধ্যে টার্মিনালের দুই পাশে দুটি ডানা তৈরি করা হবে, যেখানে ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত থাকবে। আগের পরিকল্পনায় ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ তৈরির কথা ছিল। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬টি। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভিভিআইপি টার্মিনাল তৈরির বিষয়টিও।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ। প্রথমে এ টার্মিনালের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরো ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হলে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায়। নতুন করে প্রকল্প ব্যয় বাড়লে, সেটির অঙ্ক কত হবে তা এখনো স্পষ্ট করতে পারেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)।

জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম ধাপ শেষ হলে, প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম তৃতীয় টার্মিনালে স্থানান্তর করা হবে। তবে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে কানেকটিং করিডরের মাধ্যমে পুরোনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। তখন নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা হবে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের অবকাঠামো।

পরিকল্পনা অনুসারে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, কাজের চলমান অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। এই গতিতে কাজ চললে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টার্মিনালের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন আনার কারণে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হতে খুব বেশি বিলম্ব হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনাল ভবনের ৩ হাজার ৪৯টি পাইল এবং ৬৮৪টি পাইল-ক্যাপের কাজ শেষ হয়েছে। ভবনের উভয় অংশে তৃতীয়তলার ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, ফায়ার ফাইটিং ইত্যাদিসহ প্রথম ও দ্বিতীয় তলার পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংযোজনের কাজ চলমান রয়েছে। বহুতল কার পার্কিংয়ের ৬৯৬টি পাইলিংয়ের সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। কার পার্কিং ভবনের দক্ষিণ অংশের তৃতীয়তলার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে উত্তর অংশের তৃতীয়তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে।

এছাড়া টানেল অংশের ৪৭৮টি পাইলিং করার পর টার্মিনাল অংশের ঢালাইকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়ক সংলগ্ন অংশের বেসমেন্টের সø্যাব, আরসিসি ওয়াল, স্ল্যাব ও আন্ডার গ্রাউন্ড ফুয়েল লাইন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এ দুই টার্মিনালের আয়তন প্রায় এক লাখ বর্গমিটার। আর নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বর্তমানে দুটি টার্মিনালে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ ফ্লাইট ওঠানামা করে। নতুন টার্মিনালের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হলে তা দেড়গুণ বাড়বে।

তৃতীয় টার্মিনালে মোট ৩৭টি অ্যাপ্রোন পার্কিং থাকবে। একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন পার্ক করা যাবে। বর্তমানে এ সংখ্যা ২৯টি। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন চারটি ট্যাক্সিওয়ে আছে। নতুন করে আরো দুটি ট্যাক্সিওয়ে যোগ হচ্ছে। ফলে, রানওয়েতে উড়োজাহাজকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।

এ বিষয়ে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক মাকসুদুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তন না ঠিক, এটাকে অ্যাডিশন বলা যায়। মন্ত্রণালয় এটির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। জাইকার সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি, তাদের অনুমতি নিয়েছি। জাইকা অর্থায়নে রাজি হয়েছে। ভিভিআইপি টার্মিনাল এবং দুটি পিলার অতিরিক্ত যোগ হবে। আর নতুন পরিকল্পনায় কত টাকা ব্যয় হবে সেটা আমরা এখনো পাইনি। সেটি নির্ধারণে প্রক্রিয়া চলছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close