রেজওয়ান ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

ঐতিহ্য ও যাত্রী হারাতে বসেছে সদরঘাট 

আগের মতো যাত্রীদের উপচেপড়া ভীড় নেই টার্মিনালে। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাটের কথা মনে করলেই আপনার চোখে ভেসে উঠবে সারি সারি দাড় করানো যাত্রীবাহী লঞ্চ সাইরেন বাজিয়ে চলে যাচ্ছে গন্তব্যের উদ্দেশে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠী, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, হাতিয়া, বাগেরহাট জেলার উদ্দেশ্যে মোট ৪১টি রুটে এখান থেকে প্রতিনিয়ত লঞ্চ ছেড়ে যায়। তবে বেশ কিছু কারণে এখন অতীত ঐতিহ্য ও যাত্রী দুটোই হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই লঞ্চ টার্মিনালটি।

পুরান ঢাকার মাত্রারিরিক্ত যানযট, পদ্মাসেতু চালু, কুলিদের দুর্ব্যবহার, যাত্রী নিরাপত্তার অভাবসহ নানাবিধ কারণে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে বসেছে এই লঞ্চ টার্মিনাল। গত কয়েকদিনের সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায় প্রতিটি লঞ্চ তাদের যাত্রী ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে গন্তব্যে ছেড়ে যায়, লোকশানে যাত্রী বহন করতে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের। পদ্মাসেতু চালুর এক সপ্তাহ পর থেকেই যাত্রী সংকট দেখা দেয় লঞ্চ গুলোতে। সর্বশেষ ঈদুল আজহাতেও আশার গুড়ে বালি পড়ে লঞ্চ মালিকদের, তারা পায়নি পর্যাপ্ত যাত্রী।

জানা যায়, এই নৌ পথে চলাচলকারী বেশিরভাগ লঞ্চ চলাচল করত চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। তবে পদ্মাসেতু চালু হবার পরপরই এই পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো সিংহভাগ যাত্রী হারিয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (বি আইডাব্লিউটিএ) সংস্থা থেকে জানা যায়, পূর্বে ঢাকার সদরঘাট থেকে গড়ে দৈনিক ৯৫টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাত উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও সম্প্রতি তা কমে ৬৫তে নেমে এসেছে। পূর্বের তুলনায় যাত্রী কমেছে ৩৫ শতাংশ। লঞ্চ মালিক সমিতি বলছে, সদরঘাট থেকে আগে নিয়মিত ৪১ রুটে লঞ্চ চলাচল করত। এখন ৩৮ টি রুটে চলছে । রুটের সংখ্যা তেমন না কমলেও কমেছে যাত্রী ও লঞ্চের সংখ্যা। আগে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলাচল করত। এখন সব মিলিয়ে দিনে ৩০টি চালানোও কষ্ট হয়ে যায়। আর যাত্রী কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ফলে লঞ্চ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে লোকশানেও যাত্রী টানতে হচ্ছে তাদের।

লোকসান চুকাতে কিছুদিন আগে বাই রোটেশন পদ্ধতি চালু করলেও তা আর আশার আলো দেখেনি। জানা যায়, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রী সংকটের তীব্রতা দেখা দিলে লঞ্চের মালিকরা সর্বসম্মতিক্রমে রোটেশন আকারে লঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এই রুটে ১৮ টি লঞ্চ ৬ গ্রুপ করে প্রতিদিন তিনটি করে লঞ্চ চলে যার ফলে প্রতিটিলঞ্চ ৫ দিন পরে একটি করে ট্রিপ পাচ্ছে। তবে তাতেও কোন লাভ হয়নি। এদিকে যাত্রী সংকটে অন্যান্য রুটের লঞ্চগুলোর পরিমাণও কমে এসেছে। রোটেশন প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ার ফলে লোকসানের ভয়ে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি লঞ্চ। অনেকে আবার লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে লঞ্চ কেটে লোহার দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনেকেই লঞ্চ কেটে ওজনে বিক্রি করছেন।

"দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা ভ্রমণে এখন লঞ্চের চেয়ে বাসে যেতে বেশি আগ্রহী। তাই আমরা চরম যাত্রী সংকটে ভুগছি। এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে জ্বালানি তেলের বাড়তি মূল্য। যার কারণে আমরা লঞ্চে যাত্রী পরিবহন পোষাতে পারছি না। রোটেশন করেও যাত্রী কম। লসের ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনেকেই লঞ্চ কেটে ফেলছেন।" বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা ২ লঞ্চ এর মালিক আবুল কালাম।

সার্বিক বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, "সেতু চালুর শুরু থেকেই যাত্রী কম ছিলো। অনেক ক্ষতি হয়েছে। তেলের দাম বাড়ার পরে যাত্রী আরো কমেছে। ফলে লঞ্চ কেটে ওজনে বিক্রি করছে অনেকে।" তিনি আরো বলেন, যদি তেলের দাম না কমানো যায় তাহলে যাত্রীও ফিরবে না। লঞ্চও থাকবে না। যাত্রী ধরে রাখার জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি কিন্তু তেলের দাম না কমলে কোন কিছুতেই লাভ হবে না।"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঐতিহ্য ও যাত্রী,হারাতে বসেছে সদরঘাট,লঞ্চ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close