প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ অক্টোবর, ২০২২

প্রতিমা বিসর্জনে দুর্গাপূজার সমাপ্তি

ছবি : সংগৃহীত

বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বুধবার (৫ অক্টোবর) শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দুর প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দেশের সব পূজামণ্ডপ থেকে ভক্তরা প্রতিমা নিয়ে সাগর, নদী বা জলাশয়ে বিসর্জন দেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড থেকে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউ বিগ্রহ মন্দির থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়।

এরপর ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি, টিকাটুলির সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে ইয়াংস্টার পূজা কমিটি, হাজারীবাগ সিটি কলোনি মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। একে একে বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে আসেন ভক্তরা।প্রতিমা নিয়ে আসা সারি সারি ট্রাক থেকে পর্যায়ক্রমে সেগুলো নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেওয়া হয় বিসর্জন।

ভক্তরা বিষাদ ভুলে হাসিমুখে দেবী মাকে বিদায় জানাতে উৎসবে মেতে ওঠেন। বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অন্যকে সিঁদুরে রাঙান, ঢাকঢোলের তালে নাচ-গান করেন, যেন সারা বছর এমন আনন্দে কাটে।

স্বামীবাগ থেকে এসেছেন ননী গোপাল সরকার ও তার স্ত্রী পুষ্প রানী সরকার। তারা বলেন, ‘আমরা এসেছি মাকে বিসর্জন দিতে। আজকে মাকে বিসর্জন দিলাম, যাতে মা আগামী বছর আবার আসে আমাদের সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে।’

প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সদরঘাট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় দেখা গেছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আশা করি প্রতিমা বিসর্জনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন কেউ হবে না। সবাই সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জন করতে পারবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে যাতে কোনো রকম দুর্ঘটনা না ঘটে; সেজন্য আমরা বৃদ্ধ, শিশু, ও নারীদের নৌকায় উঠতে দিচ্ছি না। এখানে পূজা উদযাপন কমিটি আছে, তারা যাদের সিলেক্ট করছে তারাই কেবল নৌকায় উঠে প্রতিমা বিসর্জন দিতে পারছেন। এ ছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতার জন্য নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিতি দেখা গেছে।’

মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শ্রী বিপুল ঘোষ শংকর বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে আমরা খুশি। সব মিলিয়ে ৯০টি মন্দির থেকে এখানে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় বিসর্জনের জন্য।’

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজামন্ডপ থেকে ভক্তরা নগরীর পতেঙ্গায় সমুদ্রসৈকতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন দেন। বুধবার দুপুর থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। ভক্ত ও অনুরাগীরা পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ভিড় করেন। এ সময় সমুদ্রসৈকত হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিরাপত্তাসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সৈকত ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এ বছর চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজামন্ডপ জেএম সেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৮২টি পূজামন্ডপে পূজা উদযাপন হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ধর্মীয় রীতি মেনে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, নেভাল-২, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ জেলায় এ বছর মোট ৫১৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের (চৌরাস্তায়) নাজমুল চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে যমুনা নদীর শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় পৌঁছে। সেখানে ঢাকঢোল, কাঁসর বাজিয়ে নারী-পুরুষসহ সব বয়সি ভক্তরা উৎসবে মেতে উঠেন। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল কুমার দাস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ড. জান্নাত আরা হেনরি, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সুকুমার চন্দ্র দাস প্রমুখ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতিমা বিসর্জন,দুর্গাপূজার সমাপ্তি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close