নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্ণিল আয়োজনে শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন
বর্ণিল আয়োজনে দৃঢ়প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র ৭৬তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু কন্যার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা, কেক কাটা, আনন্দ শোভাযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান, দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে খাবার বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়েও একই কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন করে।
জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, কোমরভাঙা, হাটুভাঙা বিএনপি লাঠির উপর ভর করেছে। লাঠির দিন চলে গিয়েছিলো বিএনপি আবার তা ফিরিয়ে এনেছে। লাঠি নিয়ে রাজপথে যত আস্ফালন হোক, আমরা এর জবাব দিবো। তিনি বলেন, সামনের দিনে পতাকার সাথে লাঠি নিয়ে নামলে খবর আছে। পরিস্কার বলে দিতে চাই, সামনে খবর আছে, লাঠি নিয়ে খেলা চলেবে না। আগুন নিয়ে খেলা, অগ্নিসন্ত্রাস চলবে না। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হারিয়ে আমরা অমানিসার অন্ধকারে ছিলাম। এর ৬ বছর পর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন রক্তভেজা দুঃখিনী বাংলায়।
বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ' কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর নানক বলেন, শেখ হাসিনার জন্ম বলেই বাঙালি আঁধারেও বোধের দ্বিপশিখাকে জ্বাজ্জল্যমান প্রদীপ রূপে লালন করার সাহস পায়। যাকে মোট ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করে আজ হন্তারক গোষ্ঠী বিশ্রামের পায়তারা খোঁজে, আর জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের সোপান বেয়ে বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্নের সিড়ির দিকে দুর্দন্ডপ্রতাপে ধাবিত হয়।
কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার (মেরুল বাড্ডা) ও খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চ এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার সকাল ৮ টায় সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মুলিবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ঘরে ঘুড়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় উপকারভোগীদের কাছে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য,দীর্ঘায় ও মঙ্গল কামনা করেন রাজশাহী বিভাগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীরা খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় তারা শেখ হাসিনার জন্য প্রাণ খোলে দু'হাত তোলে দোয়া করেন। পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংলগ্ন মাদ্রাসার মাঠে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কেক কাটেন ও বঙ্গবন্ধুসহ '৭৫ নিহত শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘায় ও মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হতদরিদ্র মহিলাদের মধ্য সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে বুধবার বাদ আসর ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলুর উদ্যোগে ওয়ারীর বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে দলীয় নেতা কর্মী ও এতিম শিশুদের নিয়ে তিনি কেক কাটেন ও মিষ্টি বিতরণ করেন। দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু এবং সুস্থতা কামনা করা হয়। এরআগে সকাল ১০টায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারে ৭৬ পাউণ্ড ওজনের কেক কেটে শেখ হাসিনার ৭৬ তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে।
একইভাবে রাজধানীর প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের দলীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনটিকে স্বরনীয় করতে আলোচনা সভা-দোয়ার আয়োজন করা হয়।
জবিতে জন্মদিন পালন : কেক কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মিলনায়তনে এক বিশাল আকারের কেক কেটে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান তারা। এরপরেই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ যোহর দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করেন তারা। কেক কাটার প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান, নীল দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ড. নাফিস আহমদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামহ বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা। এ সময় নীল দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যান্য নেতাসহ শিক্ষক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, অনুষ্ঠানে উপস্থিত সদস্যরা কেক কাটার পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেই।
৩৫ ধরনের ফলজ-বনজও ঔষধি বৃক্ষরোপণ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম শুভ জন্মদিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেক কেটে ও ঔষধি-ফলজ গাছ রোপণ করেছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বুধবার সকালে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দেশ ও বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য কামনা করে এদিনটিকে স্বরনীয় করে রাখেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সম্মানিত প্রিন্সিপাল মাহবুবুর রহমান মোল্লা। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৭৬তম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই সবুজায়ণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় উজ্জ্বল অবদান, চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সড়ক সেতুর বাস্তবায়ন,অতিমারি কোভিড-১৯ এর দুর্জোগ মোকাবেলায় স্মরণীয় সাফল্যে ও দেশের শিক্ষাব্যবস্হায় সময়োপযোগী পরিবর্তন সূচিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভীর কৃতজ্ঞতা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ করে। এদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশের সড়কের দুই পাশে নিম গাছ,আমরা,কাঠাল, জাম, কাঠবাদাম আমলকী, বিলম্ব, গোলাপ, রজনীগন্ধসহ ৩৫ ধরনের ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়।