নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

তেল-চিনির দাম কিছুটা কমেছে  

হিলি বন্দরে আমদানি বাড়ায় দাম কমছে পেঁয়াজেরও

ছবি : সংগৃহীত

বেশ কয়েক দিন থেকে বাড়তে থাকা চিনির দাম কমিয়ে তিন স্তরে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। একইভাবে কমানো হয়েছে পাম সুপার তেলের দরও। এতে এ দুটি পণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে। বেঁধে দেওয়া নতুন দর অনুযায়ী, খুচরায় চিনির দাম কেজিতে ৬ এবং পাম তেলের দাম লিটারে ১২ টাকার মতো কমেছে। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, পাম সুপার তেল প্রতি লিটার খুচরায় সর্বোচ্চ ১৩৩ টাকায় বিক্রি হবে, যা এতদিন ১৪৫ টাকায় নির্ধারিত ছিল। মিল গেটে পাম তেল প্রতি লিটার ১২৮ এবং পরিবেশক পর্যায়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একইভাবে পরিশোধিত খোলা চিনি প্রতি কেজি ৮৪ এবং প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে বর্তমানে খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিল গেটে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৭৯ এবং পরিবেশক পর্যায়ে ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে প্যাকেটজাত চিনি মিল গেটে ৮২ এবং পরিবেশক পর্যায়ে ৮৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার ‘দ্য কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট-১৯৫৬’-এর ক্ষমতাবলে মিল গেট, পরিবেশক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে তেল-চিনির দাম নির্ধারণ করল। এর আগে বিভিন্ন সময় তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সবশেষ বাজার বিশ্লেষণ করে চিনি ও পাম তেলের দাম কমিয়ে ঠিক করে দেওয়া হলো।

চাল, লবণসহ অত্যাবশ্যকীয় অন্তত ৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হবে বলে চলতি মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে আইনি জটিলতার কারণে অনেক পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া কঠিন বলে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন।

এদিকে, চিনি-তেলে সুখবর থাকলেও সবজিতে অস্বস্তি এখনো কাটেনি। প্রতিটি সবজিই কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। বাজারে সিমের কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০, চালকুমড়া পিস ৬০, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০, মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৫০, চিচিঙ্গা ৬০, পটোল ৬০, ঢ্যাঁড়শ ৭০, কচুর লতি ৮০, পেঁপের কেজি ৪০, বরবটির কেজি ৮০, ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা।

এসব বাজারে কাঁচামরিচের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। শুকনো মরিচের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

১১ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আল-আমিন বলেন, সাপ্লাই কম থাকা সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লে আবার দাম কমে যাবে।

বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম কমেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। এসব বাজারে রসুনের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাজারে চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়।

এসব বাজারে দেশি মসুরের ডালের কেজি ১৩০ টাকা। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ১০০ টাকায়। লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়।

তবে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। ফার্মের মুরগির লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। বাজারে হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ টাকা।

১১ নম্বর বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. আশিক বলেন, গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। পাড়া-মহল্লার দোকানে লাল ডিম ডজনে ৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম কবে কমবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৬০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।

১১ নম্বর বাজারের মুরগি বিক্রেতা রুবেল বলেন, পোলট্রি ফার্মের মালিকরা বলছেন, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। মুরগির উৎপাদন থাকলেও খাবারের অজুহাতে দাম বাড়তি।

এদিকে, হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, চাহিদার তুলনায় আমদানি বাড়ায় হিলি স্থলবন্দরের আড়তগুলোয় ভারত থেকে আনা পেঁয়াজের দাম কমেছে। ৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, অতিরিক্ত গরমে পেঁয়াজের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় দাম কমে গেছে। দেশের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে হিলি স্থলবন্দর দিয়েই অধিকাংশ পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরই বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এবারও তাই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। প্রথমদিকে অল্প পরিসরে আমদানি হলেও এখন তা দিন দিন বাড়ছে। পেঁয়াজ আমদানি বাড়ার বিষয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, কোরবানির ঈদ ও দুর্গাপূজার সময় স্থলবন্দর লম্বা ছুটির কবলে পড়ে। সে সময়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকে। সে সময়ের ঘাটতি পূরণ করতেই আমদানি বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমদানি করা পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে আমদানি করা পেঁয়াজের বেশিরভাগই ইন্দ্র জাতের। তাছাড়া নাসিক, রাজস্থান, নগর জাতের পেঁয়াজও অল্প পরিমাণে আমদানি হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২০ থেকে ২৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ সময় কথা হয় পেঁয়াজ কিনতে আসা কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে। এতে দামও কমেছে। কিন্তু পেঁয়াজের গুণগত মান ভালো না হওয়ায় কম করে কিনছেন। কারণ এ পেঁয়াজ গুদামে রাখা যাবে না, রাখলে পচে যেতে পারে।

পেঁয়াজ আমদানি বাড়ার বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ মল্লিক বলেন, আগের তুলনায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে। পণ্যটি কাঁচাপণ্য হওয়ায় দ্রুত ছাড় করতে আলাদা শেডসহ জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ব্যবসায়ীরা শুল্কায়ন শেষে পণ্যটি দ্রুত ছাড় করতে পারেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তেল-চিনি,দাম কিছুটা কমেছে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close