নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

চত্রেুর হোতাসহ গ্রেপ্তার ৬

প্রতারণার শিকার হয়ে নিজেরাই ‘ভয়ংকর প্রতারক’

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠানে চাকরির ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশী কমপক্ষে সাত-আটশো ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। এ চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তাররা একসময় নামসর্বস্ব নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে নিজেরাই প্রতারণার শিকার হন। চাকরির নামে প্রতারণার শিকার হয়ে পরে তারা নিজেরাই প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেন।

বুধবার (৩ আগস্ট) রাজধানরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল।

তারা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. মাছুম বিল্লাহ (৩৩), খাইরুল আলম রকি (২০), মো. কামরুজ্জামান ডেনিশ (২২), মো. মাহমুদুল হাসান (৩২), মাসুদ রানা (২৪) ও এসএম রায়হান (২৪)।

এসময় তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল ফোন, আটটি সিম কার্ড, নগদ পাঁচ হাজার ৫৪০ টাকা, একটি মনিটর, স্ট্যাম্প প্যাড দুটি, এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড ব্যানার দুটি, শতাধিক ভর্তি ফরম, দুই শতাধিক সিভি, দুটি চেকবই, পাঁচটি স্ট্যাম্প, দুটি অঙ্গীকারনামা, ভিজিটিং কার্ড, পণ্য তালিকা, মূল্য তালিকা, অর্ধশতাধিক ডিপো ও নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নামসর্বস্ব নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতারণার শিকার হয়। এরপর তারা নিজেরাই এমন প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এভাবে চক্রটি সুপরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

তিনি জানান, চক্রের হোতা মাছুম বিল্লাহ নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিতো। এ পরিচয়ের ভুক্তভোগীরা তাকে ভয় পেতেন। তিনি ভুক্তভোগীদের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতো। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার কারণে সে সুকৌশলে তার প্রতারণাকে বৈধভাবে উপস্থাপন করার জন্য ভুয়া লাইসেন্স নিজের অফিসে ঝুলিয়ে রাখতো। তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এবং গভ. রেজি. নং সি-১৫৭৭৬৩ উল্লেখ করতো। যা আসলে সম্পূর্ণ ভুয়া।

তিরি আরও জানান, মাছুম বিল্লাহর অন্যতম সহযোগী গ্রেপ্তার খাইরুল আলম রকি ও মো. কামরুজ্জামান ডেনিশ। তারা সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি নামসর্বস্ব কোম্পানিতে একইভাবে প্রতারণার কাজ করতো। ওই কোম্পানিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানের পর তারা মাছুম বিল্লাহর সঙ্গে যোগ দেয়। গ্রেপ্তার রকি চাকরিপ্রার্থীদের প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলে মগজ ধোলাই করে জামানতের টাকা আদায় করতো। গ্রেপ্তার ডেনিশ, রায়হান ও মাসুদ সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে নিয়ে আসতো। গ্রেপ্তার মাহমুদুল চাকরিপ্রার্থীদের ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র জমা নিতো।

র‌্যাব-৩ এর অভিনায়ক জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত, এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড গভ. রেজি. নং সি-১৫৭৭৬৩ লেখা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতো চক্রটি। যা দেখে চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিষ্ঠানকে সরকারের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মনে করতো। এছাড়াও এসএসএফ একটি বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার নাম হওয়ায় চাকরি প্রার্থীরা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানকে তাদের অঙ্গসংগঠন মনে করতো। বিজ্ঞপ্তিতে সিকিউরিটি গার্ড, সহকারী সুপারভাইজার, সুপারভাইজার, সিকিউরিটি ইনচার্জ, মার্কেটিং অফিসার (পুরুষ), মার্কেটিং অফিসার (মহিলা), অফিস সহকারী, লেডি গার্ড, অফিস রিসিপশনস (মহিলা) পদে উচ্চ বেতনের প্রলোভন থাকতো।

এছাড়াও ফ্রি খাওয়ার সুব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার ওপর পদোন্নতি, অভিজ্ঞতা না হলেও চলবে, কর্মঠ ও সুদর্শন হতে হবে, এসব লোভনীয় প্রস্তাব উল্লেখ করা হতো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারণার ফাঁদে পড়তো।

তিনি বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে আসার পর তাদের একটি ফরম পূরণ করতে দেওয়া হতো। ফরমে সংযুক্তি হিসেবে ছবি, অঙ্গীকারনামা, প্রার্থীর নিজ এবং বাবা-মায়ের এনআইডির কপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, নাগরিক সনদপত্র দিতে হতো। এরপর তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফরম, ট্রেনিং এবং আইডি কার্ড বাবদ সাড়ে ১২ হাজার টাকা জামানত আদায় করা হতো। পরে তাদের জানানো হতো, পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু জামানত হিসেবে টাকা নেওয়ার কোনো রশিদ দেওয়া হতো না। চাকরিতে যোগদানের জন্য একটি তারিখ দেওয়া হতো।

পরবর্তীতে প্রার্থীরা চাকরিতে যোগদান করতে আসলে তাদের বলা হতো প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন দেওয়া হবে। পরে ভুক্তভোগীরা কোম্পানির প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতো চক্রটি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভয়ংকর প্রতারক,প্রতারণার শিকার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close