reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ মে, ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধ ও ভারতে দাবদাহে গম আমদানি সংকটে বাংলাদেশ

ছবি : সংগৃহীত

গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এ ঘোষণার পর বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ, আমদানিকারকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে সরকার একের পর এক বৈঠক করছে বিকল্প উপায়ে গম আমদানি করার।

ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড শুক্রবার জানিয়েছে, নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

তবে দুটি ক্ষেত্রে রপ্তানি করা যাবে—এক, ইতিমধ্যে খুলে ফেলা যেসব ঋণপত্র বা এলসি আছে, সেগুলো বাতিল হবে না এবং দুই, খাদ্য ঘাটতিতে থাকা দেশের সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ভারত সরকার রপ্তানির অনুমতি দিলে।

ভারত কেন গম রপ্তানি বন্ধ করলো

রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে ভারত চলতি বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানির লক্ষ্য স্থির করেছিল। ইউক্রেন সংঘাতের কারণেই ভারতের দিকে ঝুঁকে গম ক্রেতারা। চলমান সংঘাতে বিশ্ববাজারে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার পূর্ণ সুযোগ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল দেশটি।

কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাওয়া, সেইসঙ্গে গমের মূল্য আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এই আশঙ্কায় রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ ভারত।

বর্তমানে ভারতজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশটির রাজধানী দিল্লিতে আজ ৪৯.২ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠতে দেখা গেছে। এর আশেপাশের অন্যান্য শহরের কোনোটির তাপমাত্রা দিনে ৪৫ ডিগ্রির নিচে নামছে না।

তবে চলতি বছরের মার্চ ছিল ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তপ্ত মার্চ মাস। মূলত মার্চের দিকেই গম তোলার সময়, আর তখন তাপের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এই ফসল। এ কারণেই এবার ফসল কাটা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ভারতের কৃষকরা।

পাঞ্জাবের কৃষক বলদেব সিং চোখের সামনেই নিজের ফলানো ফসল নষ্ট হতে দেখেছেন। বলদেবের মতে, এ বছর শীত যাওয়ার পর, বসন্ত অন্যবারের মতো শীতল ছিল না; গ্রীষ্মের মতোই তীব্র গরম পড়েছে এবার। আর এর প্রভাবেই পাঞ্জাবের কৃষক তার ফলনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হারিয়েছেন। রাজ্যের অন্য কৃষকরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন আরও বেশি।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক ভারত ঐতিহ্যগতভাবেই উৎপাদনের কিছু অংশ রপ্তানি করে থাকে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক ঘাটতি দেখা দিলে রপ্তানি বাড়িয়ে, বর্ধিত দামে ফসল বিক্রি করে তা থেকে লাভবান হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল দেশটি। কিন্তু তীব্র দাবদাহে ভাটা পড়েছে সেই পরিকল্পনায়।

চণ্ডীগড়ের কৃষি বিশেষজ্ঞ দেবিন্দর শর্মা বলেন, গম রপ্তানি করে বিশ্ববাজার থেকে এখন মুনাফার আশা করলে অভ্যন্তরীণ যোগানের ওপর তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

মূলত এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার।

বাংলাদেশে গমের চাহিদা ও আমদানিকারকদের উদ্বেগ

বাংলাদেশে চালের পর গমই হচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাহিদা সম্পন্ন শস্য। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে।

যার ১১ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়।

বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন, ১৮ শতাংশ কানাডা এবং বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করে।

কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর এনবিআরের হিসাবে, গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টন গম আমদানি হয়। এ সময়ে ভারত থেকে এসেছে ৬৩ শতাংশ।

বাকিটা এসেছে কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে।

ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করায় দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। তারা বলছে, সরকার যদি দ্রুত ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় না বসে তাহলে আমদানিকারকরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়বেন, তেমনি বাজারের গমের সংকট দেখা দেবে।

এক ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে "ভারত থেকে আমরা সিংহভাগ গম আমদানি করি। কারণ বাংলাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয়, সেটা চাহিদা পূরণ করতে পারে না। আমরা প্রতি সপ্তাহে গম আনি, প্রতি সপ্তাহে বিক্রি করে ফেলি"।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "সরকারকে এখনই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে বেসরকারিভাবে গম আমদানি করার ব্যবস্থা করতে হবে, আর দ্বিতীয় বিকল্প উৎস থেকে গম আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু বিকল্প উৎস থেকে গম আনার চেষ্টা সহজ হবে না। কারণ, ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ইউরোপে গমের চাহিদায় ভাটা পড়ায় তারা চড়া মূল্যে বিকল্প ব্যবস্থাগুলো লুফে নিবে। সেক্ষেত্রে ভারতই একমাত্র ভরসা। আর তা সম্ভব না হলে বাংলাদেশে গমের সংকট দেখা দিতে পারে।

তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, "বুলগেরিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছি। সেখান থেকে গম পাওয়া যাবে।

কিন্তু সেখানে পাওয়া গম দেশের চাহিদায় কি পরিমান যোগান দিতে পারবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

এদিকে সোমবার (১৬ মে) সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর সরকার আরও পাঁচটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ খুঁজছে।

মন্ত্রী বলেছেন, ‘কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে গম আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত আমাদের গম দেবে। গমের বিষয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গম,ইউক্রেন,আমদানি,ভারত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close