reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ এপ্রিল, ২০২২

জরিপ : প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় সাড়ে ১৪ হাজার শিশু

প্রতিনিধিত্বশীল সংগৃহীত ছবি

নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রতিদিন ‘প্রায় ৪০ শিশুর’ মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এর মধ্যে অধিকাংশেরই প্রাণ যায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে। এজন্য দায়ী অভিভাবকের ব্যস্ততা কিংবা অসচেতনতা। ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে এই তথ্য উঠে আসে।

এরপর বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু-মৃত্যু প্রতিরোধের কৌশল উদ্ভাবন করে। বিশ্বদরবারে সুনামও অর্জন করে। সেই দেশে গত ছয় বছরে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্যই সংগ্রহ করা হয়নি।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৬ সালের ওই আলোচিত জরিপের পর, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে তারা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি একনেকে বড় একটি প্রকল্পও পাস হয়েছে।

সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই জানিয়ে আমিনুর রহমান বলেন, গবেষণা আরও করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে এ ধরনের গবেষণা করা কঠিন। সরকারের সহযোগিতা পেলে আগামী বছর আরেকটা গবেষণা করব।

আমিনুর রহমানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। ৫ বছরের কম বয়সের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। অর্থাৎ, পানিতে ডুবে মারা যাওয়াদের প্রায় অর্ধেকের বয়সই ৫ বছরের কম।

সংখ্যাগুলো দিনের হিসাবে বিবেচনা করলে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩০টি শিশু প্রতিদিন মারা যায়। ১৮ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ জন আর সব বয়সী চিন্তা করলে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় ৫০ জন।

এই মৃত্যু কমানোর জন্য আমরা কিছু কৌশল বের করেছি জানিয়ে আমিনুর রহমান বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখতে হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। এই বয়সী যে শিশুরা মারা যায়, তাদের প্রায় ৬০ শতাংশ এই সময়টাতেই পানিতে ডোবে।

‘এই চার ঘণ্টা প্রাপ্তবয়স্কদের কেউ যদি শিশুদের দেখে শুনে রাখে, তাহলে শিশুর পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার শঙ্কা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যায়।’

সরকারের পদক্ষেপ : বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দুই মাস আগে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। এর মাধ্যমে ১৬টি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ বাচ্চাকে ডেকেয়ার সেন্টারের আওতায় আনা হবে। তিন লাখ ৬০ হাজার শিশুকে নতুন করে সাঁতার শেখানো হবে। এতে যে খরচ হবে, তার ৮০ শতাংশই বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বাকি ২০ শতাংশ আসবে দুটি দাতা সংস্থা থেকে।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিশু একাডেমি। সিআইপিআরবি কারিগরি সহায়তা দেবে।

আপাতত নির্দিষ্ট কয়েকটি উপজেলায় কাজ শুরু হলেও সরকারের আশা, ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে সারাদেশ এই কর্মসূচির আওতায় আসবে।

যত্ন-সচেতনতার বিকল্প নেই : পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টিকে এখন অনেকেই অভিভাবকের ‘অবহেলাজনিত অপরাধ’ বলে উল্লেখ করছেন। গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় পরামর্শ সভার আয়োজন করে, এমন বার্তাই দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি, সিআইপিআরবির মতো ব্যাপক পরিধির জরিপ না চালালেও তাদের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ মাসে, সারাদেশে ৪৬৭টি ঘটনায় ৮৩৩ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৬৮৬ জনই (৮২.৩৫ শতাংশ) শিশু। মৃতদের মধ্যে ২৮১ জন কন্যাশিশু।

সমষ্টির পরিচালক ও সাংবাদিক মীর মাসরুর জামান মনে করেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধের ব্যাপারটি সামগ্রিক যত্নের বিষয়। তিনি বলেন, বিষয়টি পারিবারিক, কমিউনিটি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যত্ন নিয়ে দেখতে হবে। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,দেশ,পানিতে ডুবে মৃত্যু,শিশু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close