reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ

ইসির সামনে জটিল সমীকরণ

ফাইল ছবি

বড় পরিসরে স্থানীয় স্তরের নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়ে গোলাক ধাঁধার মধ্যে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রাণ-সংহারী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে ওই পরিস্থিতিতে পড়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও সময়মতো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন করা সম্ভব না হওয়ায় এটাকে কেন্দ্র করে জটিল সংকট তৈরি হয়েছে। নানামুখী টানাপড়েনে ইসি এখন জটিল সমীকরণে রয়েছে বলে জানা গেছে একাধিক সূত্রে।

শুধু ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের ইস্যুই নয়, খান মো. নুরুল হুদা কমিশনের দায়িত্বকাল শেষ সময় হওয়ায় ইউপি নির্বাচন ইস্যুতে আরো জটিল সমীকরণের মুখোমুখী। রীতিমতো অঙ্ক কষে সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার ইউপি তফসিল দিতে হবে তাদের। এ ইস্যুতে একমাস ধরে একপা এগিয়েও পিছিয়ে যেতে হয়েছে দুই পা। এছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদা দেশের বাইরে ছিলেন, তাতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফেরেন।

এসব নানা অঙ্ক, সমীকরণ ও সংকট সামনে রেখে আজ রবিবার কমিশন বসছে নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনায়। আলোচনার যৌক্তিক ও বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় ঘোষণা করা হবে চলতি সপ্তাহে ইউপির তফসিল। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিসহ বিলম্বের কারণে ব্যাপক পরিসরে প্রযুক্তির সহায়তায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন করার চিন্তা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে কমিশন। এখন ৪ হাজার ইউপির মধ্যে মাত্র ৫০টিতে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নির্বাচন করবে কমিশন। সূত্র বলছে, আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশসহ দক্ষি-পূর্ব এশিয়ার ৯টি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কোন দেশ কতটুকু প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছে- সে সংক্রান্ত একটি সম্মেলন ঢাকায় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

ইসির যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো একটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে হলে ৪২ থেকে ৪৫ দিন (তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণ) পর্যন্ত সময় লাগে। কিন্তু সব ইউপির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং সময় ধাপে ধাপে বর্তমান কমিশনের মেয়াদের শেষ সময় চলে আসার কারণে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহে তফসিল দিতে হলে কীভাবে ভোটগ্রহণের সময়ে কাটছাঁট করা যায়। শুধু ইউপি নির্বাচন হলে এক ধরনের চিন্তা ছিল। পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং দুই-একটি সিটি নির্বাচনও করতে হবে এই কমিশনকে।

কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে করোনা প্রাদুর্ভাব নিম্নমুখী থাকায় সীমিত পরিসরে খোলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই তফসিল দিলেও বন্ধের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ও শনিবারকে টার্গেট ধরে নির্বাচনের ভোটের তারিখ নির্ধারণের চিন্তা করতে হচ্ছে কমিশনকে। কারণ ৪ হাজার ইউপি নির্বাচন নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হবে। আগে একদিনে ৭০০-এর কাছাকাছি নির্বাচন করেছিল কমিশন। এর আগে সর্বোচ্চ আট ধাপে ইউপি ভোট হলেও এবার সবমিলিয়ে পাঁচ ধাপে ভোট করতে হচ্ছে। প্রথম ধাপে একত্রে ৪৭১টিতে তফসিল দিলেও এবার প্রতি ধাপে ১ হাজারটিতে তফসিল দেওয়ার চিন্তা করছে কমিশন।

কর্মকর্তারা জানান, কমিশনার ও সচিবসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রাথমিক আলোচনায় দেখা গেছে, তফসিল থেকে ভোটগ্রহণ এই সময়ের মধ্যে দুটি ধাপে ভোটের সময় কমানোর সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের মধ্যে আপিল সময়ে একাধিক দিন রাখার পরিবর্তে ন্যূনতম সময় নির্ধারণ এবং প্রচারের সময় ২১ দিন থেকে কমিয়ে সর্বনিম্ন ১৬ দিন করা। এসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো, তফসিল ও দুর্যোগ বিবেচনায় কোনো উপজেলা আগে-পরে নির্বাচন করলে সুবিধা হবে সেগুলোসহ সামগ্রিক বিষয়ে আজ রবিবারের বৈঠকে আলোচনা করবে কমিশন। তাদের ভাষ্যমতে, এ সভার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশনের নোটিস জারি করা হবে।

এদিকে করোনাকালীন তফসিল থেকে ভোটগ্রহণের সময়ে কমানোর বিষয়টিতে আসন্ন ইউপির নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং বর্তামান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও খুশি। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারী ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, কমিশন যদি প্রচারের সময় কমিয়ে নিয়ে আসেন আমার জন্য ভালো হয়। একই উপজেলার গাবুরা ইউপির সম্ভাব্য প্রার্থী রবিউল ইসলাম জোয়ার্দ্দার বলেন, ভোটের সময় যত কমবে ততই নির্বাচনী ব্যয় কমবে। এটা যদি কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় তা সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ভালো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, তিন কারণে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের সামনে জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে নির্বাচন করতে না পারা, কমিশনের মেয়াদ ঘনিয়ে আসা এবং সর্বশেষ সিইসি বিদেশ সফর। আশা করছি, রবিবার এসব জটিলতা নিয়ে নিজেরা বসবেন। বৈঠকে ভোটের সময় ও ধাপ কমিয়ে ইউপির সংখ্যা বাড়ানো এবং কোন উপজেলায় আগে-পরে নির্বাচন হবে তা নির্ধারণ করা হবে। তবে এবার ৫০টি ইউপিতে ইভিএমে ভোট করা হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সারা দেশে ইউপি সংখ্যা ৪ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে ছয় ধাপে ভোট হয়েছে ৪ হাজার ৩২১টিতে এবং অন্যান্য সময়ে ভোট হয়েছে ১৬২টিতে। গত ২১ মার্চ মেয়াদ শেষ হয় ৭৫২ ইউপির, ৩০ মার্চ ৬৮৪ ইউপির, ২২ এপ্রিল ৬৮৫ ইউপির, ৬ মে ৭৪৩ ইউপির, ২৭ মে ৭৩৩ ইউপির এবং গত ৩ জুন শেষ হয় ৭২৪ ইউপির মেয়াদ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইসি,গোলকধাঁধা,ইউপি নির্বাচন,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close