এ আর চন্দন

  ২৬ মার্চ, ২০২১

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা বিশ্বময় ছড়িয়ে প্রমাণ

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট নামের নীলনকশা অনুযায়ী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অতর্কিত হামলে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। শুরু করেছিল তারা নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ। সে অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে শিরোনাম করেছিল ‘হেভি ফাইটিং অ্যাজ শেখ মুজিবুর ডিক্লেয়ার্স ইস্ট পাকিস্তান ইনডিপেন্ডেন্ট’। একই দিনে লন্ডনের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ ‘সিভিল ওয়ার ফ্লেয়ারস ইন ইস্ট পাকিস্তান : শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়।

ওই দিনই ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, ‘...২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে রেডিওতে ভাষণ দেওয়ার পরপরই দ্য ভয়েস অব বাংলাদেশ নামে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। তার এই ঘোষণা অপর এক ব্যক্তি পাঠ করেন।’

নিউইয়র্ক টাইমস-এ শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়। পাশেই লেখা হয়, ‘স্বাধীনতা ঘোষণার পরই শেখ মুজিব আটক।’

ব্যাংকক পোস্ট-এর খবরে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

বিবিসির খবরে বলা হয়েছিল, ‘কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের খবরে প্রকাশ যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।’

ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, ‘ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবুর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।’

এর বাইরে ভারতের অনেক সংবাদপত্র এবং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর।

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের ২৭ মার্চের সংখ্যার একটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব।’ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের ঢাকার পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর আটক হওয়ার ঘটনা ২৭ মার্চেই বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশিত হয়।

এত সব প্রমাণ সত্ত্বেও অন্য কাউকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আটক হওয়ার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকেই।

একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তান আর্মির জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ-সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, ‘এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার এইচ-আওয়ার বা নির্ধারিত মুহূর্ত পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল। যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।’

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তাদের সম্প্রচার শুরু করেছিল ২৬ মার্চ। তখনকার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেতারের চট্টগ্রামের কয়েকজন কর্মী শহর থেকে অনেকটা দূরে নিরাপদ জায়গা হিসেবে কালুরঘাটে বেতারেরই ছোট্ট একটি কেন্দ্রে তাদের প্রথম অনুষ্ঠান করেছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ তার জীবদ্দশায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই অনুষ্ঠানেই স্বাধীনতার সেই ঘোষণা প্রথম সম্প্রচার করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন রাজনীতিকদের মধ্যে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। অন্য এক সাক্ষাৎকারে বেলাল মোহাম্মদ জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কিত একটি লিফলেট ২৬ মার্চ সকাল থেকেই চট্টগ্রামে বিলি হচ্ছিল। সেটিই ছিল ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় চালু হওয়ার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত প্রথম ঘোষণাপত্র, যেটি পড়েছিলেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। তবে এর আগে দুপুরেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান স্ব-উদ্যোগে ওই একই লিফলেটকে ভিত্তি করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন বেতারে সংবাদ প্রচারের সময় না হওয়ায় ওই ঘোষণা প্রায় কেউই শোনেননি।

বেলাল মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন, ‘সকালবেলা ২৬ মার্চ আমরা শুনতে পেয়েছি একটা মাইকিং যে, গতরাতে ঢাকায় আকস্মিকভাবে পাকিস্তান আর্মি নিরস্ত্র জনপদে আক্রমণ করেছে এবং খন্ড খন্ড যুদ্ধ চলছে। এই অবস্থায় আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এইটুকু মাইকিং আমরা শুনেছি। ওই সময় দুপুরে একটা লিফলেট পেলাম হাতে। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের ড. আনোয়ার আলী একটা কাগজ আমার হাতে দিলেন। উনি নিজে বললেন, ‘একটা তারবার্তা এসেছে ঢাকা থেকে। আমরা এটার অনুবাদ করে এখন লিফলেট আকারে ছেড়েছি আর মাইকিংও করেছি আমরা’।

বেলাল মোহাম্মদ বলেন, কালুরঘাট থেকে প্রথম সেই ঘোষণা সম্প্রচারের ব্যবস্থা তারা করতে পেরেছিলেন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। সেই প্রথম অনুষ্ঠানে এম এ হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি পড়েন এবং তার ভিত্তিতে একটি বক্তৃতাও দেন। বেলাল বলেন, ‘আর আমরা বেতারকর্মীরা নিজেদের ভয়েসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার তারবার্তার অনুবাদ যেটা লিফলেট আকারে পেয়েছিলাম, সেটা বিভিন্ন কণ্ঠে বারবার প্রচার করি ২৬ মার্চ প্রথম ট্রান্সমিশনের এক ঘণ্টার মতো অনুষ্ঠানে।’

কালুরঘাট কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায়ও দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে সক্ষম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। সেদিনের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। সে সময় তিনি সেনবাহিনীতে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন।

বেলাল মোহম্মদ জানান, জিয়াউর রহমান ওই ঘোষণা পাঠ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য আমি যখন এদিক-ওদিক খোঁজ করছি, এক বন্ধু আমাকে বললেন যে, একজন মেজর আছেন পটিয়ায়। তিনি সোয়াতের অস্ত্র নামাবার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দেড়শ সৈন্য নিয়ে হেডকোয়ার্টারের বাইরে আছেন পটিয়ায়। এ খবর শুনে ২৭ মার্চ দিনের বেলায় আমি পটিয়ায় চলে যাই।’ বেলাল মোহম্মদ জানান, তার অনুরোধে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পটিয়া থেকে সৈন্য নিয়ে কালুরঘাটে যান জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘পটিয়া থেকে আমরা যখন কালুরঘাট পৌঁছালাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় এবং এসেই প্রোগ্রাম শুরু করা হলো এবং আমি হঠাৎ, কী মনে করে জানি না, বললাম আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানে তো আমরা সব মাইনর; আপনি একমাত্র মেজর। আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন? উনি নড়েচড়ে উঠলেন। বললেন ‘হ্যাঁ সত্যি তো, কী বলা যায় বলুন তো?’ কাগজ বের করা হলো, উনি কলম নিলেন। প্রত্যেকটি যে শব্দ তিনি উচ্চারণ করেছেন, আমিও উচ্চারণ করেছি। তারপরে লেখা হয়েছে।’

বেলাল মোহম্মদ বলেন, এভাবেই তৈরি হয়েছিল জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ রাত সাড়ে ৭টার অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবের নামে যে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন তার বয়ান।

তবে এই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি হয় রাজনৈতিক মতপার্থক্য। বিএনপি দাবি করে, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে।

কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনে প্রথমবার বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে পাঠ করেন জিয়াউর রহমান। পরদিনই সেটি পাল্টে নিজেকে ‘প্রভিশনাল হেড অব বাংলাদেশ’ এবং ‘চিফ অব লিবারেশন ফ্রন্ট’ দাবি করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন তিনি। একাত্তরের ২৮ মার্চে দেওয়া ওই ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না আসায় চারদিক থেকে প্রতিবাদের মুখে জিয়া ২৯ মার্চ আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ঘোষণা দেন।

সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণার নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল উল্লার বৈঠকের বিবরণ থেকেও বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিকল্পনার কথা আঁচ করা যায়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের পর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল উল্লাকে তার কাছে ডেকে পাঠান। তিনি তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা এ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। বৈঠকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদও উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রের ৮ম খন্ডের ২২ থেকে ২৩ পৃষ্ঠায় ওই বৈঠকের কথা উল্লেখ আছে। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু নুরুল উল্লাকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেছিলেন। ওই ট্রান্সমিটারে তিনি শেষবারের মতো ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নুরুল উল্লা, আমাকে ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে হবে। আমি যাবার বেলায় শুধু একবার আমার দেশবাসীর কাছে কিছু বলে যেতে চাই। তুমি আমায় কথা দাও, যেভাবেই হোক একটা ট্রান্সমিটার আমার জন্য তৈরি রাখবে। আমি শেষবারের ভাষণ দিয়ে যাব।’

বিভিন্ন দলিলপত্র থেকে জানা যায়, বৈঠকের পর নুরুল উল্লা সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে বার্তাটি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষককে। শুরু হয়ে যায় স্বাধীন বাংলার প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার তৈরির কাজ। বিভাগীয় প্রধান ড. জহুরুল হকসহ প্রায় সব শিক্ষক ৯ দিন কাজ করার পর একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করেন। এর সম্প্রচার ক্ষমতা বা শক্তি ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। শর্ট ওয়েভে এর শব্দ ধরা যেত। ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু করে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহর পর্যন্ত দ্রুত অবনতশীল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক রেডিওতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বেতারের ঢাকা কেন্দ্র পাকিস্তানিদের দখলে চলে গেলেও, বঙ্গবন্ধু গোপন তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন। পিলখানার এক সুবেদারের কাছে তার একটি পূর্ব রেকর্ড করা ভাষণ ছিল, যেটির কোড ছিল ‘বলধা গার্ডেন’। ক্র্যাকডাউনের খবর জেনে সেটি প্রচারের লক্ষ্যে ওই সুবেদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে দ্বিতীয় ট্রান্সমিটারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। সেখানে টেলিফোনের মাধ্যমে নতুন করে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান বঙ্গবন্ধু। একটু পরেই তা প্রচার করা হয়। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের তিন সাংবাদিকের কাছে এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বাধীনতা,বঙ্গবন্ধু,২৬ মার্চ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close