নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০২০

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুত দাঁড়িয়ে যাচ্ছে

করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে পদ্মা সেতুর মতো এগিয়ে চলছে রাজধানীর যানজটমুক্ত করার সবচেয়ে বড় প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের অগ্রগতি হয়েছে ৫৬ ভাগ। প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে লাগবে আধঘণ্টা। এখন সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো নির্মাণ গতি বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশে। দ্বিতীয় অংশেও ১০টি পাইল স্থাপনের কাজ শেষ। আর তৃতীয় অংশে চলছে জমি অধিগ্রহণ।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বিমানবন্দর থেকে ঢাকা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী যেতে সময় লাগে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা। ছুটির দিনে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। গাড়ির চাপ বেশি থাকলে সময় আরো বাড়ে। ১৯৮৩ সালে গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে সড়কপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও এক পর্যায়ে তা বাতিল করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নেওয়া হয় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এখন প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের কাজ চলছে বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত। তৃতীয় ভাগে কাজ হবে তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত।

যানজটের ধকল থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরই পর্যায়ে নির্মীয়মাণ প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথম অংশটি ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় অংশ ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ও তৃতীয় অংশ ৬ কিলোমিটারের কিছু বেশি। সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থায়ন করছে ইতাল থাই এবং চাইনিজ কোম্পানি সিনোহাইড্রো ও চায়না সেনডং। এর মধ্যে ইতাল থাইয়ের মালিকানা ৫১ শতাংশ। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে সিনোহাইড্রো ১৪ শতাংশ এবং চায়না সেনডংয়ের মালিকানা ৩৫ শতাংশ। এরই মধ্যে তিন কোম্পানি মিলে চায়না এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবিসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার। টাকার অঙ্কে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ব্যাংক দুটি প্রথম কিস্তি ৫৫ মিলিয়ন ডলার এরই মধ্যে ছাড় করেছে। চলতি মাসের শেষ দিকে দ্বিতীয় কিস্তি ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার কথা রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এর পরপরই এই অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের ওপর ৮টি পয়েন্টে থাকবে ৮টি টোল প্লাজা। নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হলে নগরীর বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে একেবারে কুতুবখালী পর্যন্ত খুব স্বল্প সময়ে পৌঁছা যাবে। সময় এবং খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলবে ৮০ কিলোমিটার বেগে। কোনো থ্রি-হুইলার উঠতে পারবে না। যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হলে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট, মগবাজার, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সড়কের ওপর গাড়ির চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। জনভোগান্তিও কমবে।

চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমভাগে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৫৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে খুলে দেওয়ার চিন্তা ছিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। কিন্তু স্বল্প দূরত্ব হওয়ায় এই চিন্তা থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকল্প পরিচালক জানান প্রথম অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৫৬ ভাগ।

কাওলা থেকে বনানী রেলগেট পর্যন্ত অংশে প্রথম ধাপের ১ হাজার ৩৩৩টি ওয়ার্কিং পাইল ড্রাইভিং, ৩২৩টি পাইল ক্যাব, ১২৫টি ক্রস ভিম, ২৩৬টি কলাম (সম্পূর্ণ) ও ১৭১টি কলাম (আংশিক), ১৯৮টি আই গার্ডার কাস্টিং এবং ১৫৭টি আই গার্ডার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।

পিপিপির ভিত্তিতে এর নির্মাণকাজ পাওয়ার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিও গঠন করে ইতালথাই। এ কোম্পানির মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ২৫ বছর পরিচালনা (সাড়ে ৩ বছর নির্মাণকালসহ) এবং টোল আদায় করা হবে। টোল আদায়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা টাকা তুলে নেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে,প্রকল্প,সড়কপথ নির্মাণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close