নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ এপ্রিল, ২০২০

বাংলাদেশ সরকারের সূচনার দিন

আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

আজ ১৭ এপ্রিল। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এ দিন থেকে ওই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে।

প্রতি বছর এই দিনে জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন করলেও এবার করোনা সব ভাসিয়ে দিয়েছে। অন্য বছর যথাযথভাবে দিবসটি পালিত হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর সীমিতভাবে মুজিবনগর দিবস পালিত হবে।

অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। এ দিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।

ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমেদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। অপরদিকে জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তি বাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।

১১ এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরের দিন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকা এবং সংবাদমাধ্যমে ১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণের এই সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক সূচনা বা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হিসেবে এই দিনটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ।

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি/নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে সীমিত সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে সীমিত আকারে দিবসটি পালন করা হবে।

এ বছর দিবসটি পালনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনিসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হবে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য সংগঠন সুবিধামতো সময়ে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।

তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্যবিধি/নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য মুজিবনগর দিবসে মেহেরপুর ব্যতিত অন্য কোনো জেলা থেকে কোনো ব্যক্তিকে মুজিবনগরে না আসার জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস,মুজিবনগর দিবস,বাংলাদেশ সরকার,মেহেরপুর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close