হাজী মো: আবুল খায়ের খান

  ২৯ নভেম্বর, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুরক্ষিত হউক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন ইসলামের প্রতি সবচেয়ে বেশী অনুরাগী। যার কারণে স্বাধীনতার পরই (ওআইসি) সম্মেলনে ছুটেযান পাকিস্তান। তিনি সমগ্র মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালি প্লাটফর্ম হিসাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। খাদ্যের সয়ংসম্পূর্ণ সহ দেশকে যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহুর্তে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালোরাতে জাতির পিতাকে রক্তেরঞ্জিত করে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ক্ষমতায় বসে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে ২৬ টি বছর’ই কুলাঙ্গার ঘাতক সেই শকুনের দল ছোবল মেরে মেরে খেয়েছে। ক্ষতবিক্ষত করেছে দেশের অর্থনীতি। স্তব্ধ করে দিয়েছিল দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা। সম্পদ লুন্ঠন করে কালো টাকার মালিক হয়ে তারা দেশ বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। হায়েনার দল আজও ক্ষমতার জন্য নানা ষরযন্ত্রে লিপ্ত। বাওয়ানি হাই স্কুল থেকে (এসএসসি) উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে জগন্নাথ কলেজে এম. এ. রেজা ও বর্তমান এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ ভাই এর আমলে আমি একজন কর্মী হিসাবে ছাত্রলীগে যোগ দেই। তখন থেকেই প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে বটতলা, আউটার স্টেডিয়াম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে সম্পৃক্ত থাকি। প্রত্যক্ষভাবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সংগ্রামেও অংশ নেই। ১৯৬৮ সালে টেলিফোন অপারেটর হিসাবে টিএন্ডটিতে যোগদান করি। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে আমার ডিউটি ছিল। ইয়াহিয়া-বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ায় রাত সাড়ে আট ঘটিকায় তোফায়েল ভাইয়ের সাথে টেলিফোনে আমার কথা হয়। তোফায়েল ভাইয়ের নির্দেশে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ছেড়ে ক্যান্টিন থেকে দা, বটি, লোকবল নিয়ে ওসমানী উদ্যানের গাছ কেটে ব্যারিকেট দেই এবং রাত ১১.০০ টায় আমুলিয়া পৌঁছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে (সিটিওর) টেলিপ্রিন্টার ম্যাসেজের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার স্বশস্ত্র যুদ্ধ। পাক বাহিনীকে হত্যা করে রাজেন্দ্রপুর অর্ডিনেন্স ফ্যাক্টরীর অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ১৭ সদস্যের মুক্তিসেনা ৩রা এপ্রিল আমুলিয়া গ্রামে আসে। ১৪১২৯ ইবিআর সিপহিী কে. এম. এম জামান কাকার সাথে আমিও যোগদান করি। ৭১ এর ১২ এপ্রিল কমলাপুর রেলস্টেশন এবং ২৬ এপ্রিল ঢাকা-ডেমরা রোডের রাতখাঁ (বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ব্রীজ) সংলগ্ন স্থানে গভীর রাতে উক্ত রেজিমেন্ট সহ আমি প্রত্যক্ষভাবে পরপর ০২ (দুই) দিন পাক বাহিনীর কনভয়ে আক্রমণ করি। জুন-ডিসেম্বর ০৭ মাস মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। স্বাধীনতা উত্তর পুনরায় চাকরিতে যোগদান করি। শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের এমপি’র সুপারিশ নিয়ে এলাাকায় বিদ্যুৎ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেলিফোন, গ্যাস আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল দলীয় সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেবের সহিত সরাসরি যোগাযোগ সাপেক্ষে ‘ডেমরা-আমুলিয়া-রামপুরা’ রাস্তাটি বাস্তবায়নে সর্বাত্বক ভাবে অংশগ্রহণ করি যে রাস্তাটি বর্তমানে চার লেনে এক্সপ্রেসওয়ে তে উন্নতি হতে যাচ্ছে।

২০১৬ সালে আমাকে ডেমরা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা কতৃক শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎশাহী সদস্য সনদ দেওয়া হয়েছে। ভারতে যাইনি, তাই মুক্তিযোদ্ধার কোনো সার্টিফিকেট নেইনি। বঙ্গ শার্দূল জাতির জনক বলেছেন আমাদের মাটি সোনার চেয়েও খাটি। এ মাটিতে বীজ বপন করলেই প্রচুর ফসল ফলে। সর্বদা দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর রাখতে হবে। পরনির্ভরশীল জাতি কখনো মাথা তুলে দাড়াতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্ষীতা এবং বিচক্ষনতায় খাদ্যেসহ অর্থনিতীতে, বিদ্যুতে, জ্বালানিতে, রপ্তানিতে, শিক্ষায়, শিল্পে, বানিজ্যে যোগাযোগে প্রভুত সাফল্য লাভ করে। প্রতিহিংসায় সেই চক্রটি করোনা, রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগে পূনরায় ষরযন্ত্রে লিপ্ত। ষরযন্ত্র করেছিল তারা মুক্তিযুদ্ধে, ষড়যন্ত্র করেছিল পদ্মা সেতু নির্মানেও। এমনকি তারা ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড, ০১/১১, ২০১৪ এর আগুন সন্ত্রাসের ন্যায় আরো গভীর চক্রান্ত করতে পারে। তারা দেশে বিদেশে ষরযন্ত্রে লিপ্ত। তারা শুধু ক্ষমতার জন্য পাগল দেশের উন্নতি ও সম্মৃদ্ধি তাদের কখনো কাম্য নয়।সমালোচনা করা যত সহজ দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ করা ততই কঠিন।

১৯৮১ সালের এক পড়ন্ত বেলায় নিজ চোখে দেখেছি ভাঙাচোরা, অগোচালো, তালাবদ্ধ বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ অফিসের বিভীষিকাময় সেই করুন দৃশ্য।তখন এমন সুন্দর গনতন্ত্র ছিলো যখন পার্টি অফিসে ঢুকা দূরের কথা, কার্যালয়ের সম্মুখে মঞ্চকরে মিটিং করার ও কোনো ছিলোনা কোনো পরিবেশ। সেদিন তোফায়েল, রাজ্জাক, নাসিম, আমু ভাইসহ ৬০/৭০ জন কর্মীর উপস্থিতিতে ৭/৮ বছরের পরশ ও তাপসকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় শেখ হাসিনা বলেছেন তিনি নিজে যেমন এতিম, তেমনি এ শিশু দুটিও এতিম। তিনি আজ রিক্ত, নিঃস্ব ও জনমদুখিনী। স্বাধীন দেশে আজ তার কথা বলারও কোনো অধিকার নাই। জনগণের ন্যায় সংগত অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের আভির্ভাব। ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতার জন্য অজশ্র ধারায় রক্ত দিয়েছে আওয়ামীলীগ। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে বিজয়ী হলো। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা যখন নিরীহ বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করতে লাগলো। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকজান্তাকে সমর্থন দিলো, ৭ম নৌবহর পাঠালো। ১৫ আগষ্ট যখন জাতির পিতাকে হত্যা করলো, ৩ নবেম্বর জেল হত্যা করলো, ইমডেমনিটি পাস করলো, ২১ আগষ্ট যখন ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করলো তখন কোথায় ছিল বিশ্ব বিবেক? কোথায় ছিলো আমেরিকা ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের গনতান্ত্রিক চর্চা? আমরা জানি ৭৪ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বন্যা পিড়িত বাংলাদেশের জন্য খাদ্য সামগ্রী বোঝাই জাহাজকে কারা চট্টগ্রামবন্দর থেকে ফিরিয়ে নিয়ে কৃতিম খাদ্য সংকট তৈরি করেছিল। গনতান্ত্রিক সরকারকে হত্যা করে সামরিক জান্তা যখন ১৫টি বছর ক্ষমতায় থাকলো তখন শক্তিধর কোন দেশ থেকে টু শব্দটিও বের হলো না, এমন কি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়েও তাদের কোন মানবাধিকার নেই। আমরা বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের চিনি। দয়া করে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে খেলুন। আফসোস হয়! যখন দেখি কৃষি জমি যারা বালু ভরাট করছে তাদের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দল কে একটি কথা বলতেও শুনি না। তারপর রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি। এভাবে বালু ভরাট অব্যাহত থাকলে এক সময় কয়েকশত টাকায়ও এক কেজি চাল মিলবে না। জনগণের পেটে খাবার না থাকলে কোন উন্নয়নই সফলতা পায় না। করোনা পরবর্তী সময় ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, এই মুহূর্তে দেশ প্রেমিক সকল রাজনীতিবিদ, সম্মানিত জাতীয় সংসদ সদস্য, শ্রদ্ধেয় মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন দেশের উন্নয়ন ধারা অপ্রতিরোধ্য গতিতে অব্যাহত রাখুন। কোন অন্যায় দ্বারা বা অন্যায়ের প্রতি আপোষ করতে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়নি। আল্লাহর রহমতে বর্তমানে দেশের ৮০% শান্তি প্রিয় লোক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পক্ষে। সাথে রয়েছে প্রশাসনের সচিব, কৃষিবিদ, (ডিসি), (ইউএনও) মহোদয়ের ন্যায় সুশিক্ষিত, মেধাবী, দায়িত্বশীল, সৎ, বিচক্ষন, আত্মপ্রত্যয়ী ও আদর্শবান হাজার হাজার কর্মকর্তা। রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনী। যারা অত্যন্ত সুসৃঙ্খল, সুদক্ষ, তেজস্বি ও দেশপ্রেমিক। তারা দেশের গৌরব ও জনবান্ধব। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনেও তারা প্রশংশিত। সুদক্ষ ও দেশপ্রেমিক উক্ত বাহিনীর সমন্বয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় এমন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করুন যাতে বাংলাদেশের আর ১ ইঞ্চি কৃষি ফসলী জমি ও ইট-ভাটা পুকুর বালু ভরাট করা না হয়। কৃষি ফসলি জমি রক্ষা কল্পে জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইনটি যথাযথ ভাবে কার্যকর করুন। অবৈধ ভাবে বালু ভরাট কৃত সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল কৃষি জমি গুলি অবিলম্ভে উদ্ধার করুন। যাদের রক্তের অনু পরমাণুতে স্বাধীনতার স্রোতধারা প্রবাহিত। নিজস্ব অর্থায়নে যারা দেশের মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। কেবল মাত্র দেশপ্রেমিক বর্তমান সরকার দ্বারাই উপকুল ও হাওর অঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার রক্ষায় স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এদেশের উন্নয়ন প্রবাহ আরো বেগবান, জোরদার, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম সুখে থাকবে, শান্তিতে ঘুমাবে ইনশাআল্লাহ। মানুষ মরনশীল। তাই কোন পদের জন্য লালায়িত না হয়ে আসুন আমরা বিনয়ের সাথে নামাজ আদায় করি, প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করি। মাতা, পিতা, আত্নীয়-স্বজন ও মুক্তিযোদ্ধা জাতির জনকের আত্মার মাগফিরাতসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ু কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ সহযোগী ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ কর্মী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুসলিম,মুক্তিযুদ্ধ,বাংলাদেশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close