রায়হান আহমেদ তপাদার
কোনদিকে চলেছে পৃথিবী
উনিশ শতকে মানুষ গড়ে মাত্র ৩৭ বছর বাঁচত, আজকে ৭৮ বছর। কাজেই সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে পৌঁছাতে না পারলেও আগামীতে যে গড় আয়ু বেড়ে ১০০ পার করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সামান্য আর্থসামাজিক ভারসাম্যহীনতাতেই কিন্তু ভীষণ রকম ডিস্টোপিয়ান হয়ে উঠতে পারে। দেখা দিতে পারে আরো বেশি অসাম্য; সেখান থেকে হতাশা ও নৈরাজ্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে উৎপাদনে রোবটের ব্যবহার এমন একপর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যে, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিশাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধনী দেশগুলোর সম্পদের ফারাক অনেক গুণ বেড়ে যাবে—উন্নত দেশগুলোর ত্রুটিহীন অসংগতির কারণে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন অভিযান শুরুর আগের দিন পুতিন ঘণ্টাব্যাপী এক দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। এই বক্তব্যে ইউক্রেনের আলাদা কোনো রাষ্ট্রের ইতিহাস নেই এবং ইউক্রেন রুশ জাতি ও ইতিহাসের অংশ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এতে করে ইউক্রেনের স্বাধীন দেশ হিসেবে অস্তিত্ব লাভের বিরুদ্ধে পুতিন হুবহু ফাউন্ডেশন অব জিওপলিটিকসে উল্লিখিত ডুগিনের বক্তব্যই তুলে ধরেন। ডুগিন উল্লেখ করেন, ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইউক্রেনকেও অংশ বানাতে হবে রাশিয়ার। পুতিন ডুগিনের প্রথম পরামর্শ ২০১৪ সালে বাস্তবায়ন করেন। একই সঙ্গে ডনবাস অঞ্চলে রুশ বংশোদ্ভূত প্রক্সিকে দিয়ে লুহানস্ক ও ডনেটক্সের একটি অংশ দখল করে নেওয়া হয়। আর এবার ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করার প্রাক্কালে এই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন পুতিন।
ডুগিনের কথা ছিল, ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করা উচিত। কারণ, একটি রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের কোনো ভূ-রাজনৈতিক অর্থ নেই, কোনো বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বা সর্বজনীন তাৎপর্য নেই, কোনো ভৌগোলিক স্বাতন্ত্র্য নেই, কোনো জাতিগত বৈশিষ্ট্য নেই। এর নির্দিষ্ট আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষা সমগ্র ইউরেশিয়ার জন্য একটি বিশাল বিপদের কারণ হতে পারে। ইউক্রেনীয় সমস্যা, মহাদেশীয় রাজনীতি নিয়ে কথা বলা সাধারণভাবে অর্থহীন। ইউক্রেনকে স্বাধীন থাকার অনুমতি দেওয়াই উচিত নয়। পুতিন এসব কথাই তার প্রাকযুদ্ধ ভাষণে বলেছিলেন। রাষ্ট্রিক ক্ষমতার সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক দর্শনের সম্মিলন ঘটলে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর কর্মকাণ্ডে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্যামুয়েল হান্টিংটনের সভ্যতার দ্বন্দ্বতত্ত্বকে গ্রহণ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ যখন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নেমে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে একের পর এক অভিযান চালান তখন আমেরিকান প্রশাসনের রাডার থেকে বেশখানিকটা বাইরে থেকে যায় পুতিনের কর্মকাণ্ড ও রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অথচ পুতিন কেবল দেশ চালানোর জন্য ক্ষমতায় আসেননি। তিনি রুশ সাম্রাজ্য বিস্তারের এক আগ্রাসী মতবাদে বিশ্বাস নিয়ে ক্ষমতায় বসেন। পুতিনের এই ডকট্রিনের গুরু হলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সি আলেকজান্ডার ডুগিন।
ওয়াশিংটন পোস্টে গত ২২ মার্চ প্রকাশিত এক কলামে ভ্লাদিমির পুতিনের মস্তিষ্ক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে রুশ কৌশলবিদ ও দার্শনিক আলেকজান্ডার ডুগিনকে। ডুগিনের কার্যক্রম যদি কেবলই তত্ত্বের মধ্যে সীমিত থাকত তাহলে এর প্রভাব বিশ্ব পরিস্থিতিতে তেমন একটা পড়ত না। পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া ডুগিনকে দেশটির ভবিষ্যৎ তাত্ত্বিক গাইড হিসেবে গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ খবর অনুসারে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘোঘণা করে বলেছেন, দ্বিতীয় পর্বে তিনি ডনবাস অঞ্চলের স্বাধীন ঘোষিত লুহানক্স ও ডনেটস্কে জোরদার অভিযান চালাবেন।
ইউক্রেন অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের সময় হয়তো এখনো আসেনি। এক মাস আগে ইউক্রেন অভিযান শুরুর সময় ধারণা করা হচ্ছিল অনধিক এক সপ্তাহের মধ্যে কিয়েভের পতন ঘটবে। এক মাসের বেশি সময় পরও সেভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো শহরের পতন ঘটাতে পারেনি ক্রেমলিন বাহিনী। এখন মস্কো ভাড়াটে সৈন্য খুঁজছে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে। এর একটি কারণ হতে পারে রাশিয়ার যে সামরিক শক্তিমত্তা হিসাব করা হয়েছিল বাস্তব অবস্থা, হয়তো সে রকম ছিল না। আর ইউক্রেনের প্রতিরোধ শক্তি সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল বাস্তবে তা অনেক বেশি। রাশিয়ার চাপ বা হুমকির মুখে ইউক্রেনকে শেষ পর্যন্ত ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করা হয়নি। অথবা ইউক্রেনে ন্যাটো সরাসরি সেনা প্রেরণ বা দেশটির আকাশকে নো ফ্লাই জোনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাশিয়াকে ঠেকানোর জন্য পশ্চিমারা সর্বাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে অকৌশলগত অস্ত্র সহায়তাও দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, পুতিন এর আগে ক্রাইমিয়া দখল করেছেন, জর্জিয়ার দুটি অঞ্চলে রুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, কাজাখস্তানে সেনা পাঠিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে যে মাত্রার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল সে তুলনায় ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বলয় কেন অনেক বেশি সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছে! ইউক্রেন যুদ্ধের আসল রহস্য কোথায়?
পুতিন ডকট্রিন ও পুরোনো প্রভাব ফেরানো ভ্লাদিমির পুতিন তার পূর্বসূরি বরিস ইয়েলৎসিন থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। ২০০২ সালে রাশিয়ার ক্ষমতার সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণের পর দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি কীভাবে রাশিয়া চালাবেন তার প্রাথমিক ইঙ্গিত দেন। এ সময় তিনি মুসলিম অধ্যুষিত চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিকে বোমা মেরে এক প্রকার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেন। মধ্য এশিয়া নিয়ে ডুগিনের চিন্তা এক কথায় ভয়ংকর। ডুগিন জর্জিয়ার আবখাজিয়া ও সাউথ ওশেটিয়াকে রুশ নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দেন। পুতিনের মস্তিষ্ক হিসেবে উল্লিখিত ডুগিনের আরেকটি পরিকল্পনা ইউরোপীয়দের বিশেষভাবে উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। ডুগিন বলেছেন, এডলফ হিটলার রাশিয়া আক্রমণের ভুলটি না করলে যুক্তরাজ্য ভেঙে যেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নেতৃত্বে বসতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্র ঘরেই বিচ্ছিন্ন এবং বিভক্ত হয়ে থাকত। আর জাপান রাশিয়ার জুনিয়র অংশীদার হিসেবে চীনকে শাসন করত।
বর্তমান রূপরেখায় রুশ সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জার্মানির সঙ্গে বিশেষ অক্ষ তৈরি করে ইউরোপকে ফিনল্যান্ডের মতো দন্তহীন নিরপেক্ষতায় নিয়ে যেতে। ডুগিন আরো প্রস্তাব করেছেন, জার্মানির হাতে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় বলয়ের কর্তৃত্ব তুলে দিতে। এজন্য ১৯৯৭ সালেই ডুগিন রুশ সরকারের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন যুক্তরাজ্যকে যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা করতে গোপন তৎপরতা চালানো হয়। এজন্য যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয় ব্রিটেন সব সময় আমেরিকান পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চায়। যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হয়ে গেলে ন্যাটোর প্রতি ফ্রান্সের আপত্তিকে কাজে লাগিয়ে জার্মানি-ফ্রান্স একটি অক্ষ তৈরির প্রচেষ্টা নিতে বলা হয়। ঘটনাক্রমে অথবা কৌশলগত দাবা খেলার পরিণতিতে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিদায় নেয়। জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার তৈরি হয় বিশেষ সম্পর্ক। এ সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে নর্থ স্টিম পাইপ লাইন-২ তৈরি হয়। এমনকি ইউক্রেন উত্তেজনা শুরু হওয়ার পরও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর শুলজ পৃথকভাবে রাশিয়া সফর করেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউরোপের মধ্যে এই দুটি দেশ সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী ভূমিকায় রয়েছে। এ কথা সত্যি যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক আগ্রাসনের পর জার্মানি ফ্রান্স ন্যাটোর প্রতি বৈরিতার পরিবর্তে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় ও সক্ষমতা বাড়াতে চাইছে।
পুতিন এক এক করে ডুগিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোনোর কারণে রুশ সীমান্তবর্তী দেশগুলো এখন নিজেদের স্বাধীনতার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সংহতির ব্যাপারে যে ধরনের ভাঙন বা শৈথিল্য তৈরি হয়েছিল সেটিও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। চীনের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ককে এখন অনেকে অবিচ্ছেদ্য হিসেবে দেখতে চান। দুদেশের শীর্ষনেতাদের কথায়ও সে রকমই মনে হয়। কিন্তু আলেক জান্ডার ডুগিন চীনকে রাশিয়ার আধিপত্যের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, চীন রাশিয়ার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এজন্য অবশ্যই সর্বোচ্চ মাত্রায় ভেঙে ফেলা উচিত চীনকে। ডুগিন পরামর্শ দেন, রাশিয়া যেন তিব্বত-জিনজিয়াং-অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া-মাঞ্চুরিয়াকে নিরাপত্তা বেল্ট হিসেবে গ্রহণ করে। রাশিয়ার উচিত চীনকে দক্ষিণ দিকে-ইন্দোচীন (ভিয়েতনাম ছাড়া), ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে সাহায্য করা। একই সঙ্গে রাশিয়ার উচিত জাপানকে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ অফার করে এবং আমেরিকাণ্ডবিরোধিতা উসকে দিয়ে জাপানি রাজনীতিতে পরিবর্তন আনা। এ ছাড়া মঙ্গোলিয়াকে ইউরেশিয়া-রাশিয়ায় বিলীন করা উচিত। এ কারণে পশ্চিমা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য ডুগিনের রহস্যময় মেগালোম্যানিয়াকে গুরুত্বসহকারে নেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, চীনের শি জিনপিংয়ের জন্য এটি তার চেয়েও বেশি জরুরি মনে হয়।
ইউরোপের সঙ্গে সংঘাতে জ্বালানি বাজার সংকুচিত ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের বাজার ও অর্থনৈতিক সহায়তার বিকল্প নেই এখন মস্কোর সামনে। কিন্তু চীন ও রাশিয়া কোনো পক্ষই এই মৈত্রীকে অবিচ্ছেদ্যের পর্যায়ে নিচ্ছে বলে মনে হয় না। বেইজিং ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে সরাসরি সমর্থন করেনি। জাতিসংঘে এই ইস্যুতে ভোটদানে বিরত থেকেছে। সুইফট নিষেধাজ্ঞার পর চীনের নিয়ন্ত্রণে চলা বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়া ও বেলারুশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ রেখেছে।
অন্যদিকে চীনের সঙ্গে ভারতের সর্বাত্মক সংঘাতের সময় মস্কো দিল্লিকে এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে। চীনের চেয়ে রুশ স্বার্থও কোনো অংশে কম নয়। তবে এই উদ্যোগ বিশ্বব্যবস্থায় আমেরিকা তথা পশ্চিমা বলয়ের আধিপত্য অবসানের এক চূড়ান্ত প্রয়াস, যা ওয়াশিংটনের জন্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ পুতিনের অভিযানে আমেরিকা বা পাশ্চাত্যের একাধিপত্যে ভারসাম্য আনার প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছেন। তারা ভাবছেন এর মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধকালীন ভারসাম্য আবার ফিরে আসবে; কিন্তু রুশ সাম্রাজ্যের স্বপ্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রাশিয়ার প্রতিবেশী কোনো দেশ স্বাধীনতা নিয়ে নিরাপদ থাকবে না। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর পুতিনের ডকট্রিন এবং রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা ও বিশ্লেষণ হচ্ছে। অভিযানের এক মাস পরও স্পষ্ট নয় এ অভিযানের ভবিষ্যৎ কী, পুতিন আসলে কী লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছেন আর তার কতটা অর্জন করতে পারছেন।
যুদ্ধ শুরু হলে নানা বাস্তব-অবাস্তব প্রচার-প্রচারণা চলে। ইউক্রেনে রুশ অভিযান নিয়ে এটি খানিকটা বেশিই হচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন হলেও এটি স্পষ্ট যে লড়াইটা হচ্ছে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার, যার পেছনে আরেক মহাশক্তি চীনের সমর্থনের কথা বলা হচ্ছে। যেকোনো যুদ্ধ শুরু করা যত সহজ শেষ করা ততটাই কঠিন। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে এটি বিশেষভাবে দেখা গেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে যেটি হতে পারে পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ। এমনকি নিউক্লিয়ার যুদ্ধেও শেষ হয়ে যেতে পারে আমাদের এই একমাত্র পৃথিবী। কাজেই সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিজ্ঞানের ঝড়ের বেগে বিরামহীন অগ্রগতির কারণে পৃথিবী যেখানে এসে পৌঁছেছে, তাকে পেছনের আয়নার দ্রুত অপস্রিয়মাণ প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখলে, আগামীর পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা বলতে পারাটা প্রায় অসম্ভব। তবে সময়ই তা বলে দেবে।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট [email protected]