reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ অক্টোবর, ২০২১

সমস্যা সংকুল এই সমাজে প্রয়োজন একটি ‘হিলফুল ফুজুল’

ফাইল ছবি

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, যিনি মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সর্বদা কাজ করেছেন৷ তিনি ছিলেন দয়ালু ও অতীব কোমল হৃদয়ের অধিকারী, তেমনি জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধী ও সোচ্চার ছিলেন৷ তিনি মানবজাতির পথপ্রদর্শক। তাঁর জীবন ও কর্ম মানবজাতির জন্য অনুপম আদর্শ, যা অনুসরণে একটি জাতি সভ্য ও সফল হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম৷

সংগঠক হিসেবে তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘হিলফুল ফুজুল’ বা শান্তিসংঘ আজো মানবজাতিকে শান্তির পথ দেখিয়ে আসছে৷ সমাজের অনৈতিকতা, শোষণ ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে তাঁর সমবয়সী কিছু যুবককে নিয়ে নবুয়াতপ্রাপ্তির ১৫ বছর আগে মাত্র ২৫ বছর বয়সে এই শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ এ সংঘের প্রতিটি কর্মসূচি যুবসমাজের জন্য শিক্ষণীয়৷ একটি আদর্শ সমাজ গঠনে বর্তমান 'হিলফুল ফুজুল'-এর নীতিমালা প্রয়োগ খুবই জরুরি বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবিদেরা।

'হিলফুল ফুজুল'-এর নীতিমালা বর্তমান সমাজে প্রয়োগের মাধ্যমে যেভাবে আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়—

মজলুম ও অসহায়দের সাহায্য করা: সমাজে নানা প্রকৃতির মানুষের বসবাস একটি প্রাকৃতিক বিষয়৷ ধনী-গরিব, বড়-ছোট ও সাদা-কালো বিভিন্ন স্বভাবের মানুষ একটি সমাজে জীবন কালাতিপাত করে৷ গরিবরা ধনীদের দ্বারা শোষিত, ছোটরা বড়দের দ্বারা শাসিত, কালোরা সাদা মানুষদের দ্বারা নিগৃহীত ও সর্বস্তরে জালিমদের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে অগণিত আদম সন্তান।

সমাজের এই অপনীতি রোধ করতে হলে 'হিলফুল ফুজুল'-এর মতো যুবকদের নিয়ে শক্তিশালী ন্যায়নীতি সংঘ প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ যারা সর্বদা সমাজের সর্বপ্রকার অন্যায়-অনাচার বন্ধে নিজেদের উৎসর্গ করবে।

অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা আনয়নের কাজে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন হয়। সেই শূন্যতা পূরণে অর্থনৈতিক 'কর্জে হাসানা' ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য৷

শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা: সমাজে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক৷ তবে সমস্যা সমাধানের বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা থাকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সমাজে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা সমস্যাকে আরো জটিলতর রূপ দিতে পছন্দ করে। ফলে সমস্যা আরো ভয়ঙ্কর রূপ নেয়৷ এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷ বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের উচিত, শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসা৷ সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমাজের গণ্যমান্য মানুষ, মেম্বার ও চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷ এর বাইরেও যদি এমন একটি শান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠা করা যায়, যা সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম৷ তবেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব৷

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী ও প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন করা: একটি সমাজের পাশাপাশি আরো অন্যান্য সমাজের বসবাস থাকে এবং এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকার মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরী৷ যদি মৈত্রী ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা যায়, তাহলে যেকোনো প্রকার উদ্যোগ নেওয়া, কর্মসূচি গ্রহণ করা ও প্রয়োজনীয় কোনো অভিযানে বের হওয়া অনেকটাই সহজ হবে৷ ফলে একটি সফল শক্তিতে পরিণত হবে৷ এ মৈত্রী ও সম্প্রীতি গড়ে তোলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে— এর মধ্যে বিবাহ বন্ধন একটি অন্যতম সফল মাধ্যম৷

পথিক ও মুসাফিরের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বিভিন্ন সমাজ বা এলাকা অতিক্রম করে যার যার নির্দিষ্ট গন্তব্য পানে ছুটে চলে৷ পথিমধ্যে তাদের বিভিন্ন স্থানে বিরতি গ্রহণ করতে হয়৷ তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ওই নির্দিষ্ট স্থানের বাসিন্দাদের উপর কর্তব্য৷ এছাড়াও পথহারা পথিকের সঠিক স্থান দেখিয়ে দেওয়াও অত্যন্ত অপরিহার্য৷ সুতরাং, এমন একটি সমাজ গঠনে 'হিলফুল ফুজুল'-এর মতো একটি শান্তিসংঘের দাবিদার৷

দুষ্কৃতকারীদের অন্যায় আগ্রাসন প্রতিরোধ করা: সাধারণত এই পয়েন্টে মক্কার কথা আসলেও প্রতিটি স্থানে এর ব্যবহার গুরুত্বের দাবিদার৷ যেমন- প্রতিটি মসজিদ ও মাদ্রাসায় কোনো জালেমকে প্রবেশ করতে না দেওয়া৷ অর্থাৎ- ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো অসৎ ও জালেম ব্যক্তিকে পরিচালনার দায়িত্বে ক্ষমতার আসনে সমাসীন না করা৷ দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখায় যায়, প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অসৎ ও জালেমদের পদচারণা অত্যধিক৷ অপরদিকে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীদের বসবাস থাকে প্রতিটি সমাজে৷ তাই তাদের সর্বপ্রকার অহেতুক আচরণের দাঁতভাঙা জবাবের ব্যবস্থা করা আবশ্যক৷ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে একটি শক্তিশালী শান্তিসংঘ অপরিহার্য৷

সর্বোপরি, একটি শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি— প্রথমত, সমাজের কর্মতৎপর যুবকদের বাছাই করা৷ দ্বিতীয়ত, সব যুবকদের সক্রিয় রাখতে সাংগঠনিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করা৷ তৃতীয়ত, সব যুবকদের নিয়ে একটি সোশাল সাইট থাকা এবং সেখানে সমাজের নানা বিষয় তুলে ধরা ও সমস্যা নিরসনে সবাই মিলে সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা৷ চতুর্থত, উক্ত সংঘের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক 'কর্জে হাসানা' ফান্ড থাকা চাই৷ উক্ত শান্তিসংঘের মাধ্যমে সামাজ কল্যাণমুখী বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা ইত্যাদি৷

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন মানুষের বিচরণ মহাকাশে৷ কিন্তু আজও মানুষের জীবনে শান্তি নেই৷ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই ও নারী নির্যাতন ইত্যাদি মানুষের জীবনকে অস্থির করে তুলছে৷ জবরদখল, জালিয়াতি, শ্রমিকের পাওনা অনাদায়, আত্মসাৎ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের খবর৷ পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতীর সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে বর্তমান যুবসমাজ৷ যাদের হাতেই ধ্বংস হতো সমাজের অন্যায়। আজ তাদের হাতেই ধ্বংস হচ্ছে প্রতিটি সমাজ৷ তাই রাসূল (সা.)-এর আদর্শের প্রতি যুবকদের ফিরে আসতে হবে৷ তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'হিলফুল ফুজুল'-এর আলোকে আদর্শ সমাজ গঠনে প্রতিটি যুবককে আত্মনিয়োগ করতে হবে৷ আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-এর সফল শান্তিসংঘের কর্মসূচি প্রতিটি সমাজে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের অন্যায়-অনাচার দূর করার পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠা করার তৌফিক দান করুক৷ আমিন !

লেখক: আবদুর রশীদ; শিক্ষার্থী : সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম; সদস্য : বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হিলফুল ফুজুল,রাসূল (সা.),শান্তি প্রতিষ্ঠা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close