সম্পাদকীয়

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বেশি কথায় টানে যম, অল্পতে পাপ কম

প্রত্যেকেই আমরা এক সীমাবদ্ধ বৃত্তে বসবাস করি। যার যার ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সেই বৃত্ত। যার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা ব্যক্তি বা মানুষের; কিন্তু এরও একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। এটিকে লঙ্ঘন করা কারো জন্য মঙ্গলকর হয়নি। আগামীতেও হবে না। ধর্ম বলছে, ‘সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না’। বিজ্ঞানেরও সেই কথা। কোনো বস্তু তার বহন ক্ষমতার বাইরে একচুলও বেশি চাপ বহন করতে অক্ষম। সুতরাং সবাই সীমা লঙ্ঘন না করার কথাই বলেছেন। এমনকি কথা বলার ক্ষেত্রেও বার টানা হয়েছে। বিজ্ঞান বলছে, বেশি কথা বললে আয়ু কমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ধর্ম বলছে, ‘অল্পতে পাপ কম/বেশি কথায় টানে যম’।

বিশ্ববরেণ্য কবি রবিন্দ্রনাথ বলেছেন, আমরা সারা দিনে যে কথাগুলো ব্যবহার করি বা বলি তার সিংহভাগই বাজে কথা অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় বা ভালো কথার পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু জাতি হিসেবে এই বাজে কথা বলাতেই আমরা অভ্যস্ত। ঘরে ঘরে এর খেসারতও কম দিতে হয়নি। তার পরও বোধোদয় হয়নি। বরং বিপরীতে গতির তীব্রতা বেড়েছে। বাড়তে বাড়তে জেলা প্রশাসকের ঝুল বারান্দা থেকে অফিস বারান্দা পর্যন্ত গড়িয়েছে বাজে আনাজের গন্ধ।

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে মন্ত্রিপরিষদ থেকে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে এবং গণমাধ্যমের কাছে বাড়তি কথা না বলার পরামর্শও এসেছে। তথ্য মতে, জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বিরুদ্ধে মাঠ থেকে আসা নানা ধরনের অভিযোগের পটভূমিতে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপ্রশাসনিক আচরণের কারণে বিব্রত, ক্ষুব্ধ ও নাখোশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, জেলার প্রধান প্রশাসক ডিসি। তাদের আচরণ ও প্রশাসনিক দক্ষতার ওপর প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কেমন তার চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু কোনো কোনো জেলার ডিসিকে দেখা যায়, ‘নিজেদের গন্ডি ছাড়িয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন’। এ নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল তৈরি হচ্ছে। এমনকি অন্য সার্ভিসের কর্মকর্তারাও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত বলেই মনে করছে মন্ত্রণালয়ের অরগানগুলো।

প্রত্যেকেরই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে বলার অধিকার আছে। তবে তা একটি নির্দিষ্ট বলয়ের মধ্যে থেকে। আমাদের সংবিধানই বলে দিয়েছে, কে কতদূর বলবেন, কে কত দূর করবেন। কোথায় সীমাবদ্ধতা এবং কতটুকু। এর ওপরই শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রতিটি নাগরিক তাদের কর্মকান্ডকে পরিচালিত করবে। সম্ভবত তাহলে আর বিপত্তির কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, আড়াই মণ বহন করার ক্ষমতা থাকলে নিশ্চয়ই সেখানে চার মণের দায়িত্ব কাঁধে তোলার মতো কর্ম এ যুগে কেউ করবে বলে মনে হয় না। যুগটা বদলে গেছে। দাস যুগে আর নেই। যুগটা দাস হোক আর পুঁজিবাদীই হোক সীমালঙ্ঘন করলে তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। অতীতে এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। তবু বোধে ঘাটতি। এ ঘাটতি কবে পূরণ হবে, তা আমাদের জানা নেই। তবে হলেই মঙ্গল।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,মুক্তমত,বেশি কথা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close